বৃদ্ধা হাজেরা বেগম

আগুনে ঘর পুড়ে সব হারিয়েছেন বৃদ্ধা হাজেরা বেগম (৬৫)। তার স্বামী সমেজ মিয়া মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। স্বামীর রেখে যাওয়ায় শেষ সম্বল ভিটা বাড়িটিও আগুনে পুড়ে যায়। এরপর থেকে বৃদ্ধা হাজেরার জায়গা হয়েছে প্রতিবেশীর গোয়াল ঘরে। তিনি অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েও এখনো পায়নি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও বয়স্কভাতার কার্ড। 

অসহায় বৃদ্ধা হাজেরা বেগম হতাশ হয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'কত মাইনষেরে চোহে (চোখে) দেহে আমার মত গরিবরে চোহে দেহে না‌‌‌‍'?

শেরপুর সদর উপজেলার ২নং চরশেরপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের হেরুয়া বালুরঘাট গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা হাজেরা বেগম। নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ঘরটা ছয় বছর আগে শীতে ঘরটা পুইড়া গেছে। তহন থাইকা আমি মনুর গোয়াল ঘরে থাহি। মাইনষের বাড়ি থাইকা চাইয়া নিয়া আইসা খাই। আমার বয়স্কভাতার কাডটার লাইগা অনেক দূর পারছি কিন্তু কার্ডটা পাই নাই। বাপু অনেক কষ্টে দিন কাটাই। আমারে সরকার যদি দেখত তাইলে আমার এটু কষ্ট কমত। বাপু আমারে একটা ঘর দিলেও থাকতে পারতাম। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে রোজগার করার কেউ নেই। বয়স হইছে ভালা কইরা হাটবার পাই না, তাউ এইবা কইরাই মাইনসের বাড়ি তনে কয়টা ভাত চাইয়া খাই। কেউ ভালো-মন্দ করলে আমারে দিয়া যা।

হাজেরা বেগমকে থাকতে দেওয়া মনু বেগম বলেন, হাজেরার ঘর পুড়ে যাওয়ার পর থেকে আমার গোয়াল ঘরে থাকে। আমি ওর জন্য চকি কিনে এক কোণায় বিছিয়ে দিছি। আমি নিজেও গরিব মানুষ, ওরে কি আমি পালতে পারমু। তাই হাজেরা এ বাড়ি, ওই বাড়ি থেকে খাবার চাইয়া নিয়া আইসা খায়।

স্থানীয় ইসরাফিল মিয়া বলেন, আমাদের সকলের উচিত এই রকম অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই বৃদ্ধা হাজেরা সবসময় দেখি অন্যের বাড়ি থেকে চাইয়া নিয়া খাই। আমার দাবি তারে যেন সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়।

ফার্নিচার ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন অসহায় ও ভূমিহীনদের জন্য সরকারি ঘর ও গুচ্ছ গ্রাম বানিয়েছেন। হাজেরার অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের দাবি তার জন্য একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করা হোক।

২নং চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তার বিষয়ে জানতে পেরেছি। সে খুব অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা নিয়ে দেওয়া যায় কিনা আমি দেখব।

শেরপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তার অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

শেখ সাঈদ আহমেদ সাবাব/আরকে