আমি সংসার দেখিনি, আমার জীবনে কোনো সুখ ছিল না : হাসানাত
মন্ত্রী পদমর্যাদার সংসদ সদস্য (বরিশাল-১) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি তুলেছিলেন আমার পিতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ঢাকার বাইরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি হয় সেটি প্রথম দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সব স্তব্ধ করে দেওয়া হয়।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার কথা অবশ্যই স্মরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। সাড়ে তিন বছর পর তাকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হলো। দুর্ভাগ্য এই জাতির, হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তারা নিজেরাই লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করলো। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যারা ক্ষমতা গ্রহণ করলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করলেন, সেনাবাহিনীর পোশাক পড়ে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন, তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথটিকে রুদ্ধ করে দিলেন। সংসদে ইনডেমনিটি বিল পাস করা হলো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার করা যাবে না। পৃথিবীর কোনো ইতিহাস, সংবিধানে বা আইনে নেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারীরা সেটাই করলো। এমনকী হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করলেন। এরপরে যে বেগম সাহেব ক্ষমতায় আসলেন তিনি হত্যাকারীদের সংসদে নিয়ে এলেন।
বিজ্ঞাপন
যে জাতি তার ইতিহাস জানে না সেই জাতি কোনোদিন মার্যাদাশীল জাতিতে উন্নতি হতে পারে না উল্লেখ করে হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমার জীবন-যৌবন রাজনীতির জন্য, এদেশের মানুষের জন্য ব্যয় করেছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এই দেশের মঙ্গলজনক সকল আন্দোলন করেছি। আমি সংসার দেখিনি। আমার জীবনে কোনো সুখ স্বাচ্ছন্দ ছিল না। আমি জীবনে ১২ বছর নির্বাসিত ছিলাম। তিনি বলেন, ফটো তুলে ফেসবুকে দেওয়া যায়, রাজনীতি হয় না। রাজনীতি করতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলার ইতিহাস এক হাজার বছরের পুরানো ইতিহাস। নিজের দেশ ও জাতির সঠিক ইতিহাসটি জানতে হবে। এটি না জানলে আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠন খুব কঠিন হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, ট্রেজারার ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুহসিন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ, প্রক্টর প্রফেসর ড. খুরশিদ আলম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, গৌরনদীর পৌর মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ, উজিরপুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টায় রঙিন বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এরপরে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এরআগে বিভিন্ন বিভাগের উদ্যোগে খণ্ড খণ্ড আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে অনুষ্ঠানস্থলে এসে সমবেত হন। সকালে আলোচনা সভা ছাড়াও বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে পদাতিক, রঙধনু, ড্যান্স ফোরাম, ডেপথ অব স্যোল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস