মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একটি মায়া হরিণের জবাই করা দেহ ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জবাই করা হরিণটি উদ্ধার করা হয়। হরিণটি কীভাবে চলন্ত ট্রেনে আসলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

বন বিভাগ ও রেলওয়ে পুলিশের দাবি- এটি মায়া হরিণ এবং একমাত্র এই এলাকায় লাউয়াছড়া বনেই এই হরিণ আছে। 

জানা যায়, কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতর ট্রেন থামিয়ে হরিণটি জবাই করেন। সেই সময় কোনো অনুমোতি ছাড়া তিনি ছয় মিনিট হরিণ জবাই করার জন্য ট্রেনটি লাউয়াছড়া বনের ভেতর দাঁড় করিয়ে রাখেন। ওই ট্রেনের একাধিক যাত্রী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

ট্রেনের যাত্রী ছিলেন সন্তুশ দাস। তিনি কুলাউড়া থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে ট্রেনে ওঠেন। 

সন্তুশ দাস বলেন, লাউয়াছড়া উদ্যানের ঢোকার কিছুক্ষণ পর আমি ওয়াশ রুমে যাই। হঠাৎ করে দেখি ট্রেন থেমে গেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বের হই। তারপর শুনি একটা হরিণের জন্য ট্রেন থেমেছে। কেউ বলছে শিকারিরা হরিণকে ফায়ার করেছে, হরিণ দৌড় দিয়ে গাড়ির সামনে পড়েছে। আবার কেউ বলছে বনবিভাগের লোকজন সঙ্গে ছিল। পরে দেখলাম হরিণ আহত হয়েছে। এর জন্য জবাই করছে। জবাই অবস্থায় নিয়া আসতে দেখছি। অনেকে ভিডিও করছে। এরপর ট্রেন ছেড়ে দেয়।

সেদিনের কয়েকটি ছবি এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। ছবিতে দেখা যায়- দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তির হাতে জবাই করার অস্ত্র । তবে তিনি চালক কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

ওই ট্রেনের আরেক যাত্রী কমলগঞ্জের সুমন আহমদ জানান, ট্রেনটি লাউয়াছড়া বনের ভেতর আসতেই থেমে যায় এবং ৬-৭ মিনিট পর একটি হরিণ নিয়ে এসে আবার ট্রেন ছাড়ে। 

সেদিন ট্রেনটি দেরি করে পৌঁছায় স্টেশনে। ভানুগাছ রেওলয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার তার রেকর্ড বুক থেকে জানান, ভানুগাছ থেকে ৮টা ২৮ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে আসে এবং ৮টা ৫৪ মিনিটে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌঁছায়। সাধারণত ২০ মিনিটে ট্রেন পৌঁছালেও ওই দিন লাগে ২৬ মিনিট।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ট্রেন না থামিয়ে কোনোভাবেই ট্রেনে তোলার কথা না। এই হরিণের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে হরিণটি আহত হয়। পরে জবাই করে ট্রেনে তোলা হয়। 
বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের শতভাগ ধারণা যে চালক ট্রেন থামিয়েছেন এবং জবাই করে তা ট্রেনে তোলা হয়। কারণ ট্রেন না থামালে তা কোকোভাবেই ট্রেনে তোলা সম্ভব নয়। এই মায়া হরিণ লাউয়াছড়া বনেই সাধারণত দেখা যায়। অতীতেও ট্রেনের ধাক্কায় হরিণ আহত বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। 

এদিকে ময়নাতদন্তে জানা যায়, হরিণটি জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। যদিও এর গায়ে আরও আঘাত ছিল।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা কর্ণ চন্দ্র মল্লিক বলেন, আমরা ময়নাতদন্ত করে বুঝতে পেরেছি প্রাণীটিকে ধারলো কোনো জিনিস দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে হরিণির মরদেহ উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানা পুলিশ। পরে তারা আমাদের জানান। আমার ধারণা চলন্ত ট্রেনের আঘাতে হরিণটি আহত হয় এবং পরে তারা জবাই করেন। আমরা ময়নাতদন্ত করে জানতে পেরেছি জবাই করার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। গায়ে আঘাতের দাগ থাকলেও তার কারণে মৃত্যু হয়নি। জবাই না করলে এই আঘাতে সুস্থ হয়ে যেত। 

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, আমার ধারণা ট্রেনের আঘাতে আহত হয় এবং পরে তা ট্রেনে তোলা হয়। কীভাবে তুলা হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না । এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে বন বিভাগ। বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে রেলওয়ে পুলিশ। 

ওমর ফারুক নাঈম/আরএআর