আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বরিশালের ভালো কোনো হাসপাতালে প্রসূতি স্ত্রীকে নিতে পারেননি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নান্দিকাঠি গ্রামের বাসিন্দা সোহেল হাওলাদার। তাই বাধ্য হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সিজার করার প্রয়োজন হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কষ্টে স্বাভাবিক প্রসব হয় তার স্ত্রীর। ফলে বাঁচানো যায়নি সোহেলের নবজাতক সন্তানকে।

শুধু সোহেল নয় এমন আরও অনেকেই রয়েছেন যারা অন্তিম মুহূর্তে নলছিটি থেকে বরিশালের হাসপাতালে পৌঁছাতে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে গিয়ে স্বজন হারিয়েছেন। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইজন চিকিৎসক নিযুক্ত করলে সহজেই চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন নলছিটি উপজেলাবাসী। এমনকি চিকিৎসক নিযুক্তের দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন এলাকাবাসী। কিন্তু তা কোনো কাজ হয়নি।

সকল যন্ত্রপাতি থাকার পরেও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সার্জনের অভাবে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার। ফলে উপজেলাবাসী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা গেছে, অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কক্ষে তালা ঝুলছে এবং মূল কক্ষে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জরুরি প্রসূতি সেবাসহ (ইএমসি) সকল ধরনের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অপারেশন থিয়েটার রুমে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়া হচ্ছে

জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মাহবুব হোসেন ও অ্যানেস্থেসিয়া (অচেতন) চিকিৎসক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে নলছিটি থেকে বদলি হয়ে যান। এরপর প্রায় ১৪ বছরেও এই দুই পদে কোনো চিকিৎসক নিযুক্ত হয়নি। এ অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন এমন প্রসূতিদেরকে নিতে হচ্ছে কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার দূরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে অনেক টাকাও খরচ হয়। যে কারণে অসচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা অস্বাভাবিক ডেলিভারির কথা জেনেও ভাগ্যের ওপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হন এই নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

স্থানীয় বাসিন্দা জসিম হাওলাদার জানান, অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমসহ জরুরি প্রসূতি সেবা ফের চালু হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকার অপচয় না, প্রসূতি মায়েরা জীবন হারানোর পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সাইফুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সিভিল সার্জন অফিসের সদিচ্ছা না থাকার কারণে ১৪ বছরেও দুজন চিকিৎসক নিয়োগ হচ্ছে না। এতে করে উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিকগুলো লাভবান হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে ১৪ বছর ধরে চিকিৎসক নেই অথচ জেলায় সিভিল সার্জন আছেন। আমার প্রশ্ন সিভিল সার্জনের তাহলে কাজটা কী?

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিউলি পারভীন বলেন, বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়াতো অন্য কেউ ওই সেবা দিতে পারবে না। সিজারিয়ান অপারেশন না করতে পারায় এলাকার প্রসূতিরা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জেনারেল সার্জন, গাইনি সার্জন, অর্থোপেডিক সার্জনসহ কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় আমি এখানে যোগদান করার পরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি জানি। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করার।

এমজেইউ