নেত্রকোণার নাজমা খাতুন। বয়স পঞ্চাশের কিছু বেশি। ঘরে তার অসুস্থ স্বামী। তাই দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বৈঠা হাতে নদীতে নৌকা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন সংগ্রামী এই নারী।

বুধবার (৮ মার্চ) নারী দিবসে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় নেত্রকোণার দুর্গাপুরের সীমান্ত এলাকার সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর ঘাটের মাঝি নাজমা খাতুনের।

নাজমা খাতুন জানান, পশ্চিম বিজয়পুরে সোমেশ্বরী নদীর তীরে তাদের বাড়ি ছিল। নদী ভাঙনে বাড়িঘরও বিলীন হয়ে যায়। তবুও দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই চলছিল তাদের জীবন। স্বামী আব্দুর রশিদ নদীতে নৌকায় পর্যটকদের আনা-নেওয়া করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এরই মধ্যে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অকালে মারা যায় ছেলে দুটি। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। এ অবস্থায় অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন নাজমা নিজেই। বাধ্য হয়ে তিনি বেছে নেন স্বামীর পেশা, সোমেশ্বরীতে নৌকা চালানোর কাজ। কোমল হাতে তুলে নেন কাঠের শক্ত বৈঠা। 

সেই থেকে ৩৫ বছর ধরে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ যোগানোসহ তাদের ভরণপোষণ চালাচ্ছেন নাজমা খাতুন। প্রতিদিন ভোর বেলায় তিনি বৈঠা হাতে চলে যান সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর ঘাটে।


  
বিজয়পুর সোমেশ্বরী নদী পার হলেই ভারতের মেঘালয়, সেটি দেখতে নদী পারাপার হয় পর্যটকরা। তাদের পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন নাজমা খাতুনের মতো অনেকেই।

পর্যটকরা খুশি হয়ে যা দেন তাই নিয়ে খুশি থাকেন নাজমা। সারাদিন নৌকা চালিয়ে কোনোদিন ৩০০ কোনোদিন ৫০০ টাকা আয় হয় তার। আবার কোনো কোনো দিন বেশিও হয়। পর্যটক না এলে কোনো দিন আবার খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। সারাদিনের পারিশ্রমিক নিয়ে সন্ধ্যায় স্বামীর ওষুধ ও খাবার নিয়ে ঘরে ফেরেন নাজমা। এভাবেই নৌকা চালিয়ে চলছে তার জীবনযুদ্ধ। 

নাজমা খাতুন বলেন, যতদিন শক্তি সামর্থ্য আছে ততদিনই এ কাজ করে যাব। দুটি ছেলে ছিল। তারা অকালে চলে গেল। তারা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার এতো কষ্ট করতে হতো না। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে খুব কষ্ট করছি। তবে সরকার যদি আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দিত তাহলে হয়তো এই কষ্টের শেষ হতো।

নাজমা খাতুনের অসুস্থ স্বামী আব্দুর রশিদ বলেন, আগে আমি নৌকা চালাতাম। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আর কোনো কাজ করতে পারি না। এ অবস্থায় আমার স্ত্রী নাজমাই নৌকা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে, আমার সেবাও করছে। সরকার যদি আমাদের একটু দেখত তাহলে হয়তো নাজমার কষ্ট কিছুটা কমতো।

দুর্গাপুর দেখতে আসা পর্যটক তন্ময় আহমেদ বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে একজন নারীর ব্যতিক্রমী এই পেশা সত্যিই প্রশংসানীয়। এই জীবনসংগগ্রামী নারীকে স্যালুট জানাই, কারণ তিনি জীবনযুদ্ধ চালিয়ে নিতে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

নেত্রকোণা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজনীন সুলতানা বলেন, নারী হয়ে তিনি নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চান তাহলে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

জিয়াউর রহমান/আরকে