ফাইল ছবি

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ১৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৮১ জন অভিযুক্ত আসামি।

শনিবার (১১ মার্চ) পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা তথ্যটি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, পঞ্চগড়ের সার্বিক পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। শহরে কেউ যেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

জেলা শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে। গতকাল শুক্রবার শহরের গুরুত্বপূর্ণস্থান, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের আবাসস্থলসহ তাদের দুটি মসজিদের আশপাশে পর্যাপ্ত পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যদের জোরদার টহল দিতে দেখা গেছে।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও জেলাজুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। কাদিয়ানীদের জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ঘটনায় ১৬টি মামলায় ১০ থেকে ১১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। যা ১৪টি মামলা সদর থানায় ও দুটি বোদা থানায় হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রয়েছে। অন্য মামলাগুলো ভুক্তভোগীরা দায়ের করেছে। পুলিশের পাশাপাশি গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে র‍্যাব ও বিজিবি। এ কারণে জেলাজুড়ে এখন বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক।

তবে পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা জানান, এ ঘটনায় কোনো সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সংঘটিত ঘটনার সময়ের ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাই কোনো নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ এলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তবে মামলা ও আসামি বেশি হওয়ার বিষয়টি নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ায় লোকজনের মধ্যে স্বাভাবিক কারণেই কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে।

গত ৩ মার্চ ঘটনার আলোকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে জেলা শহরে ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের আবাসস্থলের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আহমদিয়াদের (কাদিয়ানী) দুটি মসজিদের আশেপাশে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খল রাখতে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব এস. এম. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) কনক কুমার দাস ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাকিবুল ইসলাম স্ব-শরীরে জেলার আইনশৃঙ্খলা ডিউটি তদারকি করেন ও বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

গত ৩ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ায় শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশকে লক্ষ্য করে মুসল্লিরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ঘটনায় দুইজনের প্রাণহানি ঘটে।

সংঘর্ষের সময় বিক্ষোভকারী জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগসহ জেলা শহরের আহমদিয়াদের চারটি দোকানে আগুন ও বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা পঞ্চগড়। সেদিন রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

৪ মার্চ শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পঞ্চগড় শহর। গুজব ছড়িয়ে পড়ে ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) লোকজন দুজনকে গলাকেটে হত্যা করেছে। এমন গুজবে বিক্ষুব্ধ হয়ে কিছু মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাটসহ শহরের ট্রাক-টার্মিনালে একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয়। 

এসকে দোয়েল/আরকে