ফাইল ছবি

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় নতুন করে ২৪ জনসহ ১৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পঞ্চগড় সদর থানা ও বোদা থানায় মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও জেলা জুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবের অভিযানে বাড়ছে গ্রেপ্তারের সংখ্যা।

গত ৩ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ায় শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশকে লক্ষ করে মুসল্লিরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ঘটনায় দুইজনের প্রাণহানি ঘটে। 

সংঘর্ষের সময় বিক্ষোভকারী জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগসহ জেলা শহরের আহমদিয়াদের চারটি দোকানে আগুন ও বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা পঞ্চগড়। সেদিন রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

৪ মার্চ শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পঞ্চগড় শহর। গুজব ছড়িয়ে পড়ে ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) লোকজন দুজনকে গলাকেটে হত্যা করেছে। এমন গুজবে বিক্ষুব্ধ হয়ে কিছু মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাটসহ শহরের ট্রাক-টার্মিনালে একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় তারা।

এদিকে ঘটনাটি নিয়ে সরকারি-বিরোধী দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে পরস্পর দায় চাপানোর অভিযোগ। সরকারি দলের নেতাকর্মীর বলছেন, এ ঘটনায় বিএনপি-জামাত জড়িত। তারা তৌহিদ জনতার আড়ালে রাজনীতির ছত্রছায়ায় এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।

অপরদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, দেশে সাইক্লোন হলেও বিএনপির ওপর দায় চাপায় সরকার। সেখানে পঞ্চগড়ে হামলার ঘটনা, আলামত দেখে মনে হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের কোনো জবাবদিহিতা নেই। পঞ্চগড়ের ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং পরিকল্পিত। মূলত নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপিকে আতঙ্কের মধ্যে রাখতে এই ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩টি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ১৩টি মামলায় নতুন করে ২৪ জনসহ মোট ১৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য, বিভিন্ন স্টিল ছবি যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।

এসকে দোয়েল/আরকে