চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এই ইমিগ্রেশন খুলে দেওয়া হয়। ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার (রাজশাহী) মনোজ কুমার এ ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। 

এখন থেকে সোনামসজিদ-মহদীপুর স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারবেন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। এতে দূরত্ব কমবে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। করোনা পরিস্থিতিতে সোনামসজিদ বন্দর বন্ধ হওয়ার কারণে ব্যবসা, চিকিৎসা ও ভ্রমণ করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীসহ আশপাশের জেলাগুলোর যাত্রীদের যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হতো। এতে অতিরিক্ত দূরত্ব বেড়েছিল প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। 

উদ্বোধনকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গত ১২ মার্চ চালু হওয়ার কথা ছিল সোনামসজিদ-মহদীপুর স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন। তবে কিছু কাগজপত্রের জটিলতায় তা হয়নি। ফলে আজ ১৬ মার্চ দুপুরে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার এ ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এতে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের ভারতগামী যাত্রীদের একদিকে যেমন খরচ কমবে, তেমনি কমবে দূরত্ব। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণে আমরা ২৫ জন ব্যবসায়ীকে নিয়ে ভারতে যাচ্ছি এই ইমিগ্রেশন দিয়ে। 

তরিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ তিন বছর ধরে আমরা ব্যাপক দুর্ভোগে ছিলাম। আমদানি-রপ্তানির কাজে আমাদেরকে ওপারে (ভারত) যেতে হয়। কিন্তু গত ৩ বছর যশোরের বেনাপোল দিয়ে যেতে হয়েছে। এতে দূরত্ব যেমন বেড়েছে ৬০০ কিলোমিটার, তেমনি খরচও অনেক হয়েছে। আমরা স্বস্তি পেয়েছি এই ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায়। 

মেসবাউল হক, বায়োজিতসহ কয়েকজন পাসপোর্টধারী যাত্রী বলেন, আমরা সোনামসজিদ স্থলবন্দরে গমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করি। তাই মাঝে মাঝে ব্যবসার কাজে আমাদের ভারতে যেতে হয়। কিন্তু সোনামসজিদ-মহদীপুর স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় আমাদের বেনোপোল দিয়ে জেতে হতো। এতে প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হতো। টাকাও বেশি খরচ হতো। আজ থেকে এই ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে জেতে পারবো। এতে আমাদের ভোগান্তি কম হবে। 

সোনামসজিদ ইমিগ্রেশনের কুলি সাইদুর রহমান বলেন, গত তিন বছর ধরে ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকার কারণে বেকার হয়েছিলাম। এই পেশায় কাজ করে সংসার চালাই। কিন্তু গত তিন বছর ধরে তা করতে পারিনি। আবার বন্দর চালু হওয়ায় নিজেদের পেশায় ফিরতে পারলাম। ভালো লাগছে, আবারও কাজে ফিরতে পারছি।

ফিতা কেটে সোনামসজিদ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের উদ্বোধন করা হয়। পরে উভয় দেশের বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান এবং মিষ্টি বিনিময় করেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, ভারতের মহদীপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (কাস্টমস) দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বৈভব চৌধুরী, বিএসএফের কামান্ডেন্ট সঞ্চয় শর্মা, মহদীপুর স্থলবন্দরের সুপার এলসি ইনচার্জ দেশ দুলাল চ্যাটার্জি প্রমুখ। 

এর আগে একাধিকবার সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন পরিদর্শন করেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার (রাজশাহী) মনোজ কুমার। সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন খুলে দেওয়ায় ভারতীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গের সরকার, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার, এফবিসিসিআইসহ বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, সোনামসজিদ রুটে বছরে লক্ষাধিক বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারতে যাতায়াত করেন। এগুলো বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের লোকজনকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাতায়াত করতে হচ্ছিল। এতে সময় ও অর্থ দুটোয় বেশি লাগতো। 

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ সোনামসজিদ চেকপোস্ট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ তিন বছর যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকলেও আমদানি-রপ্তানির জন্য সোনামসজিদ স্থলবন্দর চালু ছিল। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটির বিপরীতে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মহদীপুর স্থলবন্দর।

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর