ফরিদপুরে পাগলা কুকুরে কামড়ে ছয়টি গ্রামের শিশু-নারী, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের ৩৩ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ও পাশের কানাইপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইপুরের হলুদবাড়িয়া গ্রাম থেকে একটি লাল রঙের কুকুর হঠাৎ করে সবাইকে কামড় দেওয়া শুরু করে। প্রথমে কামড় দেয় হলুদবাড়িয়া গ্রামের মিম নামের দুই বছরের এক শিশুকে। এরপর ফুশরা, সাঁচিয়া, বিল নালিয়া, তাম্বুল খানা ও সবশেষে শোলাকুন্ডু গ্রামে কুকুরটি তাণ্ডব চালায়। এর ফলে এলাকায় আতঙ্ক নেমে আসে। পরে শোলাকুন্ডু এলাকায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে এলাকাবাসী কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

কুকুরের কামড়ে আহত ৩৩ জনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে গুরুতর আহত ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩ জন হলেন- কানাইপুর  ইউনিয়নের হলুদবাড়িয়া গ্রামের আবদুস সোবহানের স্ত্রী খালেদা (২৮), ফুসরা গ্রামের নাজমুলের ছেলে সাব্বির (৪), সোবহানের ছেলে ছেলে সাদ্দাম (৯), মানিক খানের ছেলে হামিম খান (৭), শোলাকুন্ডু গ্রামের আলমগীরের ছেলে সামিউল (৯), আবদুল আলীর মেয়ে তমা (২০), রানু বেগম (৬০), মামুনের মেয়ে জামিলা (৭), মাজেদের মেয়ে হাসি বেগম (৩৫), তাম্বুলখানা গ্রামের শামিমের মেয়ে সিনথিয়া (৬), সাচিয়া গ্রামের সেকেন শেখের মেয়ে সীমা (২৪), মোসলেমের মেয়ে মিম (২), বিলনালিয়া গ্রামের শওকতের ছেলে ফারদিন (৬)।

কৈজুরী ইউনিয়নের সাচিয়া গ্রামের বাসিন্দা রুমি মিয়া বলেন, তার চার বছর বয়সী নাতনি সিনথিয়া খেলা করছিল। এসময় হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগে কুকুর কামড়িয়ে তাকে আহত করে। পরে তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে এনে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়।

শোলাকুন্ডু গ্রামের বাসিন্দা মাজেদ নিয়া (৩৬) বলেন, তার তার স্ত্রী হাসি বেগম বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করছিলেন। কিছু বুঝে উঠার আগে তাকে কুকুরে কামড়ে দেয়। তার স্ত্রী ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাক্সিন নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা যায়, বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুকুরে কামড়ানো এই রোগীদের সামলাতে হিমশিম খায় নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা। তবে প্রত্যেক আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ভ্যাক্সিন থাকায় চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হয়নি।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মুনতাসির হাসান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৩ জন কুকুরে কামড়ানো রোগী চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে এসেছেন। আহতদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

হাসপাতালের এন্টি র‍্যাবিস ভ্যাক্সিন কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আনসার আলী হাওলাদার বলেন, যাদের ক্ষত কম ছিল তাদের ভ্যাক্সিন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের ক্ষতের মাত্রা বেশি তাদের হাসপাতালে ডাইরিয়া ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক গণেশ কুমার আগরওয়ালা বলেন, একদিনে বিভিন্ন বয়সীর অনেককে কুকুর কামড় দিয়েছে এরকম ঘটনা আগে শোনা যায়নি। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে কুকুরের কামড়ে আহতরা এখন শঙ্কামুক্ত।

জহির হোসেন/আরকে