‘হিজড়াদের বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না মানুষ। মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে, মাস শেষে ভাড়া পাওয়া নিয়ে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা থাকা নিয়ে। মানুষ আমাদের স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় না। আমরা হিজড়া, আমাদের তারা (মানুষের) ভাবে ভিন্ন এক মানুষ। আমাদের বিষয়ে মানুষের মধ্যে নীতিবাচক ধারণা রয়েছে। বাড়িওয়ালা হিজড়াদের বাড়ি ভাড়া দিতে নাক সিটকায়। এই নাক সিটকানো থেকে আজ আমাদের মুক্তি দিলেন মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ 

বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদের হল রুমে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে চতুর্থ পর্যায়ে জমি ও ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে পাঁচজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিজ নিজ অনুভূতি প্রকাশ করেন। তারা রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ কাশিয়াডাঙ্গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ ঘর পেয়েছেন। 

তারা হলেন, পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হাড়ুপুর এলাকার রুবেল হোসেন ওরফে রবিনা, দুয়ারী বাঁধের ধারে বসবাসকারী সাগর আলী ওরফে সাগরিকা ও কৃষ্টগঞ্জ সাঁওতালপাড়ার ধীরেন সরকার ওরফে নদী খাতুন, নওহাটা পৌরসভার পূর্বপুঠিয়াপাড়ার আসাদ আলী ওরফে সাথী খাতুন ও বড়গাছী ইউনিয়নের নাগশোষা গ্রামের সম্রাট ওরফে সুমী খাতুন।

উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হাড়ুপুর এলাকার রুবেল হোসেন ওরফে রবিনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খুব খুশি। আমাদের স্থানীয় একটা জায়গা হলো। এখন আর কেউ বলতে পারবে না, চলে যেতে (ভাড়া বাড়ি থেকে)। এখন বুক ফুলিয়ে চলতে পারব। মাথা উঁচু করে চলতে পারব। 

তিনি বলেন, আমি ভাড়া বাড়িতে থাকি। যখন-তখন বাড়ির মালিক বলে ছেড়ে দিতে। তারা মনে করে আমরা ভাড়া দেব না। তাই বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না আমাদের। আমাদের পরিবারটাকে (হিজরা সম্প্রদায়) মেনে নিতে চায় না। আমাদের বাড়ি ভাড়া দেয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ি দিয়েছে। থাকার জায়গা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ।

বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা সরকার ওরফে বিজলী বলেন, বাবা-মা জন্ম দিয়েছে, আমাদের কর্ম শেখাতে পারেনি। এক টুকরো জায়গা দিতে পারেনি। একটা বাড়ি দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা বিশ্বমাতা, মানবতার মা। আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এক টুকরো জমি দিয়েছেন, ঘর দিয়েছেন। এটা সরকারের একটা মহতি উদ্যোগ।

পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লসমী চাকমা বলেন, পবা উপজেলায় ৫৩৫টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে ২৮৮টি ঘর প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছেন। এদের মধ্যে রাজশাহীর পবায় পাঁচজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। 

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সহায়-সম্বলহীন নিঃস্ব মানুষদের। তাদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের পাঁচজন রয়েছেন। তাদের বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ্‌ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দেশে প্রথম ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পুনরায় জমি ও ঘরের মালিকানা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন। সেই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না বলে ঘোষণা করেন। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজশাহীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে।

আশিক/আরএআর