‘ইহলৌকিক লস, পারলৌকিক লাভ’ স্লোগানে যশোরে বাজার দরে ক্রয়কৃত পণ্য পাঁচ শতাধিক মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী এ ব্যবসায় লস করার উদ্দেশ্যে এমন ভিন্নধর্মী বাজার বসিয়েছে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। যার নাম দেওয়া হয়েছে আইডিয়া সানাবিল লস প্রজেক্ট। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে আইডিয়া পিঠা পার্কে এ বাজার বসানো হয়। 

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, আইডিয়া সানাবিল লস প্রজেক্ট ৫৩৭টি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রি করছে। একজন ক্রেতা-পরিবার প্রতি ৫৪ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় ৫ কেজি, ২৫ টাকা কেজি দরের আলু ১০ টাকা করে ২ কেজি ও বাকি ৭ টি পণ্য ১ কেজি করে ১৪০ টাকা দরের ডাল ৪০ টাকায়, ১২০ টাকা দরের চিনি ৪৫ টাকায়, ১৯০ টাকা লিটারের তেল ১২০ টাকায়, ৪৫ টাকা দরের পেঁয়াজ ২০ টাকায়, ৯৫ টাকা দরের ছোলা ৬০ টাকায়, ৬০ টাকা দরের চিড়া ২০ টাকায়, ৩২০ টাকা দরের খেজুর ১০০ টাকায় ক্রয় করতে পারবে। প্রতি পরিবার সপ্তাহে একবার করে মোট চার বার এই বাজার করার সুযোগ পাবে। 

বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সমমানের এই ৯টি পণ্য একজনের ক্রয় করতে প্রয়োজন ১২৮৭ টাকা। যা তারা ৫৫০ টাকায় পাবেন আইডিয়া লস প্রজেক্টের বাজারে। 

আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকরা মাসব্যাপী যশোরের ৫ নং ওয়ার্ডে জরিপ করে মধ্যবিত্ত ৫৩৭টি পরিবারকে এই প্রজেক্টের আওতায় নিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে কার্ড বিলি করে। এর মধ্যেই অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে যে সব মধ্যবিত্ত এসেছিলেন তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে ফিরিয়ে না দেওয়ার।

মধ্যবিত্ত আবু হাসান (৪৭) ৫৫০ টাকা দিয়ে পণ্য ক্রয় করে ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, রমজানে বাজার কীভাবে করবো এই চিন্তায় ছিলাম। লসের বাজার থেকে সাধ্যের নাগালে সব পণ্য অর্ধেক দামে কিনতে পেরেছি। এই মাসে আমাদের খাওয়ার চিন্তা থাকলো না। 

খড়কী এলাকার হাসনা বেগমও আসেন এ মধ্যবিত্তের বাজারে। তিনি বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। রামজানের বাজার নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। বাজারে গেলে এ কয়টা পণ্য কিনতে এক হাজার টাকারও বেশি লাগতো, কিন্তু এখান থেকে মাত্র ৫৫০ টাকায় ৯টা পণ্য কিনেছি। এ দিয়ে এক সপ্তাহ চলে যাবে। পরের সপ্তাহে এ বাজারে আবার আসবো।

আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও যশোর এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক বলেন, মধ্যবিত্ত দান চায় না, প্রাণ চায় না, চায় পরিত্রাণ। আমাদের সাধ্যের মধ্যে আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আমরা কিছু মানুষ যোগ হলেই সম্ভব বহু মানুষের পরিত্রাণের ব্যবস্থা করা। আমার শিক্ষার্থীদের শেখাতে চাচ্ছি- সকল লস আসলে লস নয়, মানবসেবা লস নয় বরং লাভ। গত বছর লস প্রজেক্টের মাধ্যমে সেই তৃপ্তির স্বাদ আমার শিক্ষার্থীরা পেয়েছে। এ বছরও তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি প্রচেষ্টা, যেন সমাজের সকলের সামনে এই এলাকা মডেল হয়। আমাদের প্রচেষ্টায় যদি ৫৩৭ পরিবার স্বস্তি পায়, তাহলে আরও নানা এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে এই চেষ্টা আরও মানুষকে মুক্তি দিতে পারবে। আইডিয়া সানাবিল লস প্রজেক্টের মতো এমন লসের বাজার দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো দ্রব্যমূল্যের অভিশাপ থেকে রক্ষা পাবে। 

এ্যান্টনি দাস অপু/আরএআর