পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত তিন শিক্ষার্থীকে বিদেশে (ভারত) চিকিৎসার জন্য পাঠাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই তিন শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসার খরচ বহন করবে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় বিনোদপুর বাজারে স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তাদের চোখে আঘাত লাগে। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও পরে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, বুধবার (২২ মার্চ) আহত ওই তিন শিক্ষার্থীকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে ফেরত পাঠানো হয়। চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে তাদের বিদেশে চিকিৎসার নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

তারা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মিসবাহুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলিমুল ইসলাম এবং আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আল আমিন। তবে তাদের মধ্যে আল আমিন ও মিসবাহুল বুধবার রাতে রাজশাহীতে ফিরেছেন। আর মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আলিমুল ইসলাম পাসপোর্টের কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

আহত শিক্ষার্থী আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দুই চোখের সমস্যা। এক চোখে একটু দেখতে পাচ্ছি। তাও আবার ঘোলাটে। আমাদের তিনজনের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারা চিকিৎসার সব খরচ দেবে।

আহত শিক্ষার্থী আল আমিনের বাবা আবদুস সেলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন চিকিৎসার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় দেবে। আপনি চিন্তা করিয়েন না। আমার ও ছেলের পাসপোর্ট করতে দেব। ছেলের চিকিৎসার জন্য আমিও যাবো। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর ঢাকা বলেন, চিকিৎসাটা দীর্ঘ মেয়াদী। আহত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চাচ্ছেন বিদেশে চিকিৎসার করতে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। একই সঙ্গে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. পঙ্কজের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. পঙ্কজের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ যৌথভাবে এটা করবে। মিসবাহুল ইসলামের পাসপোর্ট ও ভিসা রেডি রয়েছে। তাকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে আলিমুল ইসলাম ও আল আমিনকে পাঠানো হবে। 

প্রসঙ্গত, ১১ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাস হেলপারের কথা-কাটাকাটির জেরে বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় থানা ও রেলওয়ে পৃথক তিনটি মামলা করেছে।

শাহিনুল আশিক/এমএএস