শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনগুলোতে টার্গেট করে তারা চুরি করতেন। নড়াইল ছাড়াও আশপাশের মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, প্রিন্টার, স্ক্যানার, সিলিং ফ্যানসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি করতেন। পরে এসব জিনিস কম দামে বিক্রি করতেন তারা। 

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে নড়াইল জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার ও প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাল উদ্ধারের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার বাটিকাবাড়ি গ্রামের তৈয়ব আলী শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩০), টেংরাখোলা গ্রামের সোহাগ সরদারের ছেলে রিজু সরদার (১৮) ও মাগুরার সদর থানার বাটাজোড় গ্রামের মৃত শিবপদ দাসের ছেলে নেপাল দাসকে (৩০) নড়াইল সদরের ভওয়াখালি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গোপালগঞ্জ সদরের মজিবর রহমান মোল্যার ছেলে মতিউর রহমান রাসেলকে (৩৫) ফরিদপুর থেকে এবং একই জেলার ধোপাকান্দা গ্রামের মৃত মতি মোল্যার ছেলে সোবহান মোল্যা (৩৮) ও উজানিয়া গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার ছেলে আরমান মোল্যাকে (২০) ওই জেলার মুকসুদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, নড়াইল, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্রান্ডের ৩৯টি ল্যাপটপ, ১৪টি ল্যাপটপের চার্জার, ৭২টি সিলিং ফ্যান, ৪টি প্রজেক্টর, ৩টি প্রিন্টার, ১টি স্ক্যানার, ১৬টি মিনি সাউন্ড বক্স, ২টি কম্পিউটার বক্স, ৩টি কী-বোর্ড, ২টি মাউস ও ১০টি মোবাইল জব্দ করা হয়। এছাড়াও একটি মোটরসাইকেল, একটি সেলাই রেঞ্জ, ২টি প্লাস, ৩টি স্ক্রু ড্রাইভার ও নগদ ৮১ হাজার টাকা জব্দ করে পুলিশ। উদ্ধার ও জব্দ হওয়া মালামাল যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরও জানান,   গত ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ তিন দিন স্কুল বন্ধ থাকায় লোহাগড়া উপজেলার বিএসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের জানালার গ্রিল কেটে ১৭টি ল্যাপটপ ও ১৫টি ল্যাপটপ চার্জার চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের মামলার ভিত্তিতে চুরি মামলার কার্যক্রম তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের মালিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি মাসের ১৬ মার্চ একই ধরনের অপর একটি চুরির ঘটনা ঘটায় নড়াইল সদর থানায় মামলা হয়।

তিনি বলেন, উভয় মামলার চুরির ধরন ও প্রকৃতি একই রকম হওয়ায় পুলিশের একাধিক ইউনিটকে নিবিড়ভাবে মামলা দুটি ছায়া তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলা দুটি তদন্তকালে ১৭ মার্চ নড়াইল সদর উপজেলার চাকই পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও হবখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস চুরির আরও দুটি ঘটনা ঘটে। 

নড়াইল জেলার বিভিন্ন স্কুলে এসব চুরির ঘটনার সূত্র ধরে মাঠে নামে জেলা পুলিশের একাধিক টিম। সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল (সিসিআইসি) একটানা কাজ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্তের পাশাপাশি তাদের সকল ব্যক্তিগত তথ্য অপারেশন টিমের কাছে হস্তান্তর করে। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দোলন মিয়া জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও জেলা পুলিশের একাধিক টিম নড়াইল, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মালামাল উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

জেলা পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া কেউই নড়াইলের বাসিন্দা নয়। এদের মধ্যে শহিদুল ও রিজু বিভিন্ন এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে রেকি করে টার্গেট স্থির করতেন। সুযোগ বুঝে চুরির পর অল্প মালামাল হলে নেপাল দাস মোটরসাইকেলে বহন করতেন।  বেশি হলে বিকল্প ব্যবস্থায় পরিবহন করে জেলার বাইরে নিয়ে যেতেন। এদের মধ্যে কেউ ইলেকট্রনিকসের ব্যবসার আড়ালে চুরি মালামাল লুকানোর কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে নড়াইলের চার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য জেলার চুরি হওয়া মালামালও রয়েছে। এই চোর চক্রে সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছি।

ঘর ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নাম পরিচয়, কর্ম যাচাই করে বিস্তারিত তথ্য নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দোলন মিয়া (সদর সার্কেল), সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি সাজেদুল ইসলাম ও জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সজিব রহমান/ওএফ