কাল ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দিবসটিতে জাতির বীর সন্তান একাত্তরের মহান শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে গোটা জাতি। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। 

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাবেন জাতির বীর সেনানিদের প্রতি।

শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। রং করা হয়েছে চত্বরের বিভিন্ন স্থানে। সাজানো হয়েছে নতুন নতুন ফুলের টব দিয়ে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। তিন বাহিনীর কুচকাওয়াজের প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে প্রায় একমাস স্মৃতিসৌধে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রায় দেড়শতাধিক কর্মী। তাদের নিরলস পরিশ্রমে নতুন রূপ পেয়েছে সৌধ এলাকা।

শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ১০৮ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা নতুন করে সেজেছে। নানা রঙের ফুলের চাদরে প্রায় ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। চত্বরের সিঁড়িসহ নানা স্থাপনায় পড়েছে তুলির আঁচড়। ধুয়ে মুছে চকচকে করা হয়েছে সৌধচূড়া থেকে হেঁটে যাওয়ার পথসহ (হেরিংবন্ড) স্মৃতিসৌধ চত্বরের প্রতিটি স্থাপনা। শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো গাছগুলো ছেঁটে পরিপাটি করে তোলা হয়েছে। বসানো হয়েছে নানা রঙের ফুলের টব। 

স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বসানো হয়েছে। সৌধ চত্বরের চারপাশে কয়েকশ টবে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের ফুল আর পাতা বাহারের গাছ। নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডগ স্কোয়াড দিয়ে প্রতিটি স্থান তল্লাশি করছে। লাল-সবুজের আলোক বাতিতে ছেয়ে গেছে সৌধের চারপাশ। রাত হলে এসব রঙিন আলোকসজ্জায় আলোকিত হয়ে উঠবে স্মৃতিসৌধের চারপাশ।

স্মৃতিসৌধ এলাকার প্রস্তুতি সম্পর্কে জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আমরা গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন করেছি। পাশাপাশি নিরাপত্তা রক্ষায় সিসিটিভি স্থাপনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেই সঙ্গে দেশের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষও আসবেন। সেই লক্ষ্যে পুরো সাভার উপজেলা, বিশেষ করে স্মৃতিসৌধ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে বহিরাগতদের সৌধ এলাকার ভেতরে ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় কারা কারা অবস্থান করছেন সেটা প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিভিল পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন। পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেন কোনো প্রকার অসঙ্গতি না থাকে সে বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২৬ মার্চ যারা স্মৃতিসৌধ এলাকার রাস্তা ব্যবহার করে গাবতলীর দিকে যাতায়াত করতে চান তারা যেন অন্তত প্রথম প্রহরে এ রাস্তাটি এড়িয়ে চলেন।

আরকে