‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সাত দিন বয়সী মেয়েকে রেখে পরিবারের কথা চিন্তা না করে যুদ্ধ চলে যাই। মনে শুধু একটাই বাসনা ছিল দেশকে মুক্ত করতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১৭৩ জন। এটি এখন প্রতি বছর বাড়তে বাড়তে তিন শতাধিক পার হয়েছে। যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার লাইসেন্স করে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। মারা যাওয়ার পর তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হচ্ছে। এটি আমার কাছে অপমানজনক। তাই আমি জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। মৃত্যুর পর আমাকে যাতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা না হয়।’ 

এভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো ঢাকা পোস্টকে বলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের ছোট পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা দবিরুল ইসলাম। তিনি ওই গ্রামের মৃত সফিজ উদ্দীনের ছেলে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। 

 জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া আবেদন পত্র

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া আবেদন পত্রে লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার বহর দেখে চেতন মুক্তিযোদ্ধারা দুঃখিত, ব্যথিত, লজ্জিত ও অপমানিত। মৃত্যুর পর আর অপমানিত হইতে চাই না। আমাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করবেন না।’  

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করতে চাই, দেশে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে আছে। তাদেরকে সঠিকভাবে তদন্ত করা হোক। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীসহ আরও গোয়েন্দা সংস্থার জনবল দিয়ে তাদের তদন্ত করুন। তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা বের করে নিয়ে আসুন। তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত বোধ করবেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন একটি আবেদন আমরা পেয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় দাফন এটি রাষ্ট্রের নিয়ম। কী কারণে তিনি সেটি চান না সে বিষয়ে আমরা তার সাঙ্গে কথা বলব। 

এম এ সামাদ/আরকে