রংপুরে জাপটে ধরেছে শীত
শীতের তীব্রতা কমাতে আগুন পোহাচ্ছেন মানুষ
‘সকালবেলা জারোতে কষ্ট হয়। ফির দুপুর হইলে গরম। সইন্দা থাকি ফির জার জাপটে ধরে। এমন করিয়্যা হামার দিন যাওছে। একটা কম্বল পাচু। কিন্তু ওটা দিয়্যা জার কমে না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার ভবঘুরে মনতাজ মিয়া।
৪৮ বছর বয়সী মনতাজ মিয়া সারাদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। সন্ধ্যা হলেই চলে আসেন শাপলা চত্বর এলাকায়। রাতে ঘুমান স্থানীয় আশরাফিয়া জামে মসজিদের বারান্দায়। প্রতিদিন সকাল হলেই বেরিয়ে যান। নিয়মিত গোসল না করায় তার শরীর ধুলোবালুমাখা। পরনে থাকা কাপড়েরও একই অবস্থা।
বিজ্ঞাপন
মনতাজ মিয়ার মতো অনেক ভবঘুরে আছে রংপুর নগরীতে। যাদের বেশির ভাগেরই রাতের বেলায় জায়গা হয় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। কেউবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় থাকেন। এসব ছিন্নমূল মানুষের কেউ কেউ ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া শীতবস্ত্র পেয়েছেন। আবার কারও ভাগ্যে এখনো জোটেনি এক টুকরো চাদর।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল আটটায় রংপুর নগরীর বাবুখাঁ, দর্শনা, বারো আউলিয়া ও নগর মীরগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের কারণে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি খুবই কম। তবে কেউ কেউ জরুরি কাজে বের হলেও পরনে ছিল মোটা কাপড়।
বিজ্ঞাপন
নগর মীরগঞ্জ বাজারের কাছে দেখা মেলে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতের তীব্রতা নিবারণের চেষ্টায় ব্যস্ত হামিদ, সোহরাব ও আব্দুল হকসহ আরও অনেকের। তারা প্রতিদিন সকালে এভাবেই খড়কুটো জ্বালিয়ে হাত-পা গরম করে নেন। পরে চলে কাস্তে-কোদাল আর লাঙল নিয়ে নেমে পড়েন খেতখামারে।
কষ্টের কথা বললেন কৃষক আব্দুল হামিদ, বাড়িত তেমন গরম কাপড় নাই। গত বছর একান জাম্পার (জ্যাকেট) পাচনু। এবার তো হামার এত্তি এ্যালাও কায়ো শীতবস্ত্র দেয় নাই। সকালে পুরাতন জাম্পার পরি বাইরোত ব্যারাইলেও জার বুজা যায়। কষ্ট হয়।
মাঘ আসতে বাকি ২০ দিন। কিন্তু ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষদের কাছে এ যেন মাঘের শীত। হিমেল হাওয়ায় সাথে ঝিরঝির জলফোঁটায় ভিজে গেছে প্রকৃতির বুক। দিগন্তজোড়া মাঠে প্রতিদিনের মতো কাজে ব্যস্ত কিষান-কিষানি। শীতের সকালে সবুজের খেতবুননে তাদের কাছে লাপাত্তা শীত। তবে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখি টের পাচ্ছে শীতের তেজ
রংপুরে শীতের সকালে এসব ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। কোথাও কোথাও সড়কে, অলিগলি আর খোলা জায়গায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চললেও ঘরে বাইরে উষ্ণতা পেতে বেশির ভাগ মানুষের শরীরে রয়েছে মোটা কাপড়।
মাঘ আসতে বাকি ২০ দিন। কিন্তু ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষদের কাছে এ যেন মাঘের শীত। হিমেল হাওয়ায় সাথে ঝিরঝির জলফোঁটায় ভিজে গেছে প্রকৃতির বুক। দিগন্তজোড়া মাঠে প্রতিদিনের মতো কাজে ব্যস্ত কিষান-কিষানি। শীতের সকালে সবুজের খেতবুননে তাদের কাছে লাপাত্তা শীত। তবে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখি টের পাচ্ছে শীতের তেজ।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হতে দেখা যায়। কয়েক দিন ধরে দেখা মিলছে সূর্যের। তাপমাত্রার উন্নতিও হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
শহর থেকে একটু দূরে গ্রামে থাকা ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন বেশি। অনেকের শীতবস্ত্র কেনার মতো সামর্থ্যও নেই। তাই খড় ও শুকনা পাতা কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা।
এদিকে শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তরাঞ্চলের বহু মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছেন। এরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধা বয়সের মানুষ বেশি। পাশাপাশি আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণে চেষ্টা করা অনেকেই অগ্নিদদ্ধ হয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হচ্ছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাপোস্টকে জানান, শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত রংপুর জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায় ৮ দশমিক ৫। রংপুরে আগামী দুই-তিন তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও জানুয়ারির শুরুতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে।
এদিকে শীত নিবারণে অসহায়, দুস্থ, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের পাশে সরকার, বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে শীতবস্ত্র করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদসহ রংপুর জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, শীতের শুরুতেই রংপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ৫১ হাজার ৬০০ কম্বলের মধ্যে রংপুর নগরীসহ জেলার আট উপজেলায় প্রায় ৪৭ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫৩ লাখ টাকা সমমূল্যের চাহিদা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এনএ