‘আমার সোনা মানিক কত নামাজি কত ভালো ছিল। সারাদিনে কাজকর্মের মধ্যেও নামাজ পড়ত। গত সোমবার আমারে ফোন করে বলে মা আমি ১০ দিনের ছুটি পাইছি, আমি ওমরা করতি যাব। তুমি দোয়া কইরো আমার জন্য। কিন্তু আমার মানিক ওমরা করতি পারল না। তার আগেই বাস দুর্ঘটনায় ছেলেটা মারা গেল।’ বাড়ির উঠানে বসে বুক চাপড়ে আহাজারি করতে করতে এসব কথা বলছিলেন সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলাম ওরফে নাজমুলের (২৮) মা খাদিজা বেগম।

নিহত নাজমুলের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ঘুণী গ্রামে। বছর খানেক আগে সৌদি আরবে পাড়ি দেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা নাজমুল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গত সোমবার (২৭ মার্চ) কর্মস্থল থেকে ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। নাজমুলের মৃত্যুতে গোটা এলাকা যেন শোকের চাদরে মোড়া।

বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাজমুলের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রীসহ স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ। নাজমুলের পরিবার থেকে জানা গেছে, নাজমুল সাত ভাই-বোনের মধ্যে পঞ্চম। সৌদি আরবের আভা কামিম শহরের একটি রেস্তোরাঁতে ওয়েটার হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে গত সোমবার দিবাগত রাতে একটি বাসে ওমরাহর উদ্দেশে সৌদি আরবের মক্কা যাওয়ার পথে আবহা এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাদের বাসটি। বাসটিতে ৪৭ জন যাত্রী ছিল। একটি সেতুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এতে মারা যায় ২২ জন যাত্রী। নাজমুলের সঙ্গে দুর্ঘটনায় অন্তত ১৮ বাংলাদেশি মারা গেছেন।

নাজমুলের খাদিজা বেগম বলেন, আমি যখন সোমবার তারাবির নামাজ পড়ি তখনই হঠাৎ করে ফোন আসল। নামাজের মধ্যেই ভাবলাম, ঐ মনে হয় আমার নাজমুল ফোন দিছে। তবে নাজমুল না, তার এক সহকর্মী ফোন দিয়েছে। ফোনটা আমার বড় ছেলে ধরেছিল। ধরেই অপর প্রান্ত থেকে বলল, নাজমুলের বাসে আগুন লেগেছে। নাজমুল মারা গেছে।

নাজমুলের বাবা কওসার মোল্লা বলেন, আমার অন্য সন্তানদের চেয়ে নাজমুল শান্ত প্রকৃতির। বিদেশ যাওয়ার কয়েক মাস আগে বিয়ে করেছিল। বউ রেখে সংসারের হাল ধরবে, নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই বিদেশ গেছিল। আমার সেই ছেলেটা এভাবে চলে যাবে কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি।

নাজমুলের বড়ভাই কামরুল ইসলাম বলেন, নতুন বউ রেখে বিদেশ গেছিল নাজমুল। ওর কোনো সন্তান হয়নি। আমাদের নিয়েই ওর ভাবনা-চিন্তা ছিল। আমাদের ছেলে-মেয়েদের যত আবদার ছিল সব নাজমুলই পূরণ করতো। ওর কত স্বপ্ন ছিল, এক দুর্ঘটনায় দুঃস্বপ্নে রূপ দিয়েছে।

নাজমুলের চাচা আবুল কালাম বলেন, তার মৃত্যুতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। নাজমুলের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। তার মরদেহ স্থানীয় একটি হাসপাতালে রয়েছে। আজ ডিএনএ টেস্ট হয়েছে। সরকারিভাবে যোগাযোগ করছি দ্রুত নাজমুলের মরদেহ দেশে আনতে। 

এ্যান্টনি দাস অপু/ওএফ