যশোরে হু হু করে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত এক মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন কয়েক শ রোগী। ক্রমশ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারা। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে ডায়রিয়া বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

সরেজমিনে শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, শয্যা সংকটে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। 

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ৫টি শয্যা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা ৫ জন। গত দুই দিন আগে শিশু রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭ জন।

ডায়রিয়া আক্রান্ত মনিরামপুরের ঢাকুরিয়া গ্রামের সনাতন (২৪) ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত পরশু দিন থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। বাজার থেকে পেঁয়াজু, চপ খেয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় স্বজনরা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। 

হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি এক শিশুর বাবা ওহিদুল জানান, গত তিন দিন আগে তার বাচ্চাকে তরমুজসহ নানা ফল খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে খাওয়া বন্ধ করে দেয় আর পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যায়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় সীমাখালী থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে তার শিশুকে ভর্তি করেছেন। 

শার্শা উপজেলার নাভারণ এলাকার বাসিন্দা নয়ন (৩০) বলেন, ডায়রিয়া হওয়ার মতো তেমন কিছু খেয়েছি বলে মনে হয় না। তবে আমার খাবার পানির প্রতি সন্দেহ হচ্ছে। বাকিটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে বোঝা যাবে। 

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে যশোরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য শয্যার সংকট আছে। তবে রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবস্থাপনার কোনো কমতি নেই।

হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা বিভিন্ন ভাজাপোড়া, পানীয়, ফল খেয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে চিকিৎসকরা খাবার পানি নিয়েও ভাবছেন। 

ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, গত বছর যশোর জেলায় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। ফলে পানির লেয়ার অনেক নিচে নেমে গেছে। পানির লেয়ার নিচে নামার কারণে সুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে লেয়ারের স্পর্শ হতে পারে। ঢাকায় আইইডিসিআরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে সেখান থেকে সম্ভবত পাঁচজনের একটি ডায়রিয়া স্পেশালিস্ট টিম পাঠানো হবে। তারা এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। 

এ্যান্টনি দাস অপু/আরএআর