চলতি বছরকে আমের ভালো ফলনের বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগ। মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুলও আসতে দেখা যায়। প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে আমের গুটি আসার কথা জানায় কৃষি বিভাগ। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ঐতিহ্যবাহী ফজলি ও আশ্বিনা আমের হঠাৎ গুটি ঝরে যাওয়ায় হতাশ সেখানকার আম চাষিরা।

আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ফজলি ও আশ্বিনা আমের গাছে অধিক পরিমাণে মুকুল হয়েছিল। তবে মুকুল ফোটার তুলনায় গাছে তেমন গুটি নেই। এতে অন্যতম প্রধান দুই জাতের আমের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টি কম হওয়ায় আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী আম উৎপাদন হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোবরাতলা, গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ, কানসাট, নয়ালাভাঙ্গা, সোনামসজিদ, রামচন্দ্রপুরহাট ও নয়াদিয়াড়ী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফজলি, আশ্বিনা, খিরসাপাতি, লক্ষণভোগ, আম্রপালি, বারি-৪, গোপালভোগসহ সব গাছেই প্রচুর পরিমাণে মুকুল এসেছিল এবার। তাই খুশি হয়ে যথাযথ পরিচর্যাও করেছিলেন চাষিরা। তবে গত ২০ মার্চ রাতে হঠাৎ বৃষ্টি হয়। এতে আমের জন্য ভালো হবে আশা করে দুশ্চিন্তামুক্ত ছিলেন চাষিরা। কিন্তু বৃষ্টির পর থেকেই আমের গুটি ঝরতে শুরু করে। বর্তমানে ফজলি, আশ্বিনাসহ কয়েক জাতের আমের গাছে পর্যাপ্ত গুটি নেই। এতে আমের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চাষিদের।

শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের মর্দনা গ্রামের আমচাষি জিয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবছর কয়েক জাতের আম বাগান রয়েছে আমার। তবে লক্ষণভোগ ও খিরসাপাতি আমে অনেক গুটি রয়েছে। কিন্তু আশ্বিনা ও ফজলি আমের মুকুলে গুটি খুবই কম। একেবারে নেই বললেই চলে। এখনো মুকুল ঝরে পড়ে যাচ্ছে। এতে ফজলি ও আশ্বিনা আমের ফলন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। অথচ মোট ২৭ বিঘা জমির বাগানের মধ্যে এই দুই জাতের আমের গাছই বেশি।

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের নশিপুর গ্রামের আমচাষি তরিকুল ইসলাম জানান, আমাদের বাগানটি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর আগের। এই বাগানের প্রায় ৬০ শতাংশ গাছই ফজলি ও আশ্বিনা আমের। শুরুর দিকে মুকুল দেখে খুবই আশাবাদী ছিলাম। সে অনুযায়ী পরিচর্যাও শুরু করেছিলাম। কিন্তু গুটি আসার পর থেকেই ঝরে পড়ছে। এখন গাছে আমের গুটি নেই বললেই চলে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাগানে এ বছর ব্যানানা ম্যাংগো, আম্রপালিসহ কয়েক জাতের আম গাছ রয়েছে। সব গাছে মুকুলও ভালো হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন থেকে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। বিশেষ করে আশ্বিনা ও ফজলি আমের গাছে যথেষ্ট গুটি নেই। এছাড়াও আম্রপালি গাছেও গুটি অনেক কম। এতে আমের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম জানান, কয়েক বছর ধরেই আম চাষিরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এবারও প্রায় সব গাছের আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। তবে বেশি গুটি ঝরে গেছে আশ্বিনা ও ফজলি আমের। সরকারিভাবে সব কৃষি ফসলেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য নানা রকম প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আম চাষিদের জন্য কোনো প্রণোদনা নেই। তাই আম চাষিদের দাবি, তাদের জন্যও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, জেলায় এমন অনেক আমবাগানে রয়েছে, যেসব বাগানে সেচ দেওয়ার সুবিধা নেই। এতে কিছু আম ঝরে যাচ্ছে। তবে এখনো আমাদের আশা, চলতি বছর আমের উৎপাদন অনেক বেশি হবে। কারণ এবার অনেক বেশি মুকুল এসেছে। গুটি ঝরা বন্ধ করতে হলে সেচের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। ফলে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছিল। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমি থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং ২০২০ সালে ৩৩ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়।

জাহাঙ্গীর আলম/এবিএস