‘ক্ষ্যাতে পানি জইম্মা গ্যাছে। কপাল পোড়ছে। ঋণের টাহা ক্যামনে দিমু হেইয়া কইতে পারি না। চত্তিরের দেওই (বর্ষা) মোর সব শ্যাষ কইররা দেছে।’

চৈত্রের বৃষ্টির পানিতে ডুবে পচে যাওয়া তরমুজ তুলতে তুলতে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের ফাসিপাড়া গ্রামের চাষি মাসুম। তিনি নিজের জমানো টাকা আর ঋণ করে প্রায় ৪০০ শতাংশ জমিতে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তরমুজ চাষ করেছিলেন। 

চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে ক্ষেতের তরমুজগুলো পেকে তোলার উপযোগী হতো। কিন্তু তার আগেই মৌসুমী বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গেছে। পানি অপসারণ করার সুযোগও নেই তার। ক্ষেতেই ডুবে নষ্ট হচ্ছে মাসুমের সোনালি স্বপ্ন।

তিনি বলেন, ফলন চমৎকার হয়েছিল। বৃষ্টির পানি জমে না গেলে এ বছর মুনাফার পরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হতো। এখন যে তরমুজটি ধরছি সেটিই দেখছি পচে গেছে। 

শুধু কৃষক মাসুম নয় এই উপজেলার কমপক্ষে এক হাজারেরও বেশি তরমুজ চাষি চৈত্রের হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়েছে উপকূলীয় এই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২১০০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সবগুলো ইউনিয়নে মৌসুমী এই ফলের চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় লতাচাপলী, ধুলাসার, লীলগঞ্জ ইউনিয়নে। এসব ইউনিয়ন ঘুরে কৃষকদের হাহাকার দেখা গেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর এক থেকে দেড় হাজার কৃষক তরমুজ চাষ করেন এখানে। এ বছর ইতোমধ্যে পরিপূর্ণ পক্ব হওয়ার আগেই শ পাঁচেক চাষি ক্ষেতের তরমুজ তুলতে পেরেছেন। বাকিরা অপেক্ষায় ছিলেন পরিপূর্ণ পাকার। কিন্তু তা আর না হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ওই এক হাজার চাষির। 

আরেক চাষি ইসমাইল ঘরামি বলেন, তরমুজ চাষের পদ্ধতি অনুসারে ক্ষেতে নালা করে তাতে কীটনাশক দিয়ে রাখা হয়। পর্যায়ক্রমে তা গাছ শুষে নেয়। কিন্তু হঠাৎ ৩-৪ দিনের বৃষ্টিতে নালার কীটনাশক পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ায় গাছগুলো মারা যাচ্ছে। পচে যাচ্ছে তরমুজও। 

তিনি বলেন, তরমুজে এককালীন চাষে লাভবান হওয়ার আশায় বাজারে আমার মুদি দোকান বন্ধ করে পরিবারসহ সকলে মিলে দিনরাত ক্ষেতে থেকে চাষ করেছি। কিন্তু শেষ সময়ে এসে বৃষ্টি সব ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। আমার স্বপ্ন ছিলে ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করে একটি সুন্দর ঘর তৈরি করবো। ঘরতো আর হবে না এবার ঋণের টাকা না দিতে পেরে ঘরছাড়া হতে হবে।

নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, বৃষ্টিতে অনেক কৃষকেরই তরমুজ নষ্ট হয়েছে। তবে কিছু দিন পর বৃষ্টি হলে হয়তো এই ক্ষতি হতো না। ইতোমধ্যে আমি উপজেলা কৃষি অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করবো। 

কুয়াকাটা রাখাইন মার্কেট বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বজলুল হক খান বলেন, অন্য বছর এই সময়ে বাজারে তরমুজ বোঝাই থাকতো। কারন এই বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ যেত। কিন্তু এ বছর বাজারে জমা তরমুজ নেই। কারন অনেক চাষীর তরমুজ ক্ষেতেই পঁচে গেছে।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার এআরএম সাইফুল্লাহ বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক ইতিমধ্যে ক্ষেতের সব তরুমুজ বিক্রি করতে পারলেও কিছু সংখ্যাক চাষী বৃষ্টিতে তুলতে পারেনি। তবে কৃষি অফিস থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকছি। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিসহ উপজেলার দেড় হাজার চাষীকে বিনামূল্যে বীচ ধান এবং সার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

আরএআর