চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবৈধ এনজিও মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় থাকা ৩৫ হাজার গ্রাহকের আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এনজিওটির বিভিন্ন শাখার কর্মচারী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। 

রোববার (০২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে মধুমতি এনজিওর শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর শাখার কর্মচারী পলি বেগম বলেন, আমি মধুমতির অফিসে রান্নার কাজ করতাম। সেখান থেকে পাওয়া বেতনের টাকাগুলো উঠাতাম না। পরিবারের ছেলেমেয়েকে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও সংসারে কাজে লাগাতে টাকাগুলো জমা রেখেছিলাম। জমা হয়ে মোট ৬৫ হাজার টাকা হয়েছিল। শত কষ্টের মধ্যেও টাকা উত্তোলন করিনি। কিন্তু সেই টাকাও এখন পাচ্ছি না।

সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের স্নাতক পড়ুয়া লতিফা খাতুন বলেন, আমার কোনো ভাই নেই। বাবার উপার্জনের ছয় লাখ টাকা মধুমতি এনজিওতে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ হওয়ার পরও এখন চিকিৎসা করার জন্য টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। বারবার এনজিও অফিসে ঘুরেও দিব দিচ্ছি বলে না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। টাকার জন্য এখন অসহায় দিন যাপন করছি।

সদর উপজেলার কালিনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নাইমুল হক বলেন, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা জেলাজুড়ে ৪৬টি শাখায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সাধারণ জনগণকে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ১২০০ টাকা লাভ দেওয়া হবে এবং জমাকৃত টাকা চাওয়া মাত্র ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত সংগ্রহ করে মধুমতি। এভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে তারা। আজ-কাল করে এখন টাকা ফেরত দিচ্ছে না। টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেলশাদ আলী, নইমুদ্দিন, সলেহা বেগম, আকলিমা বেগমসহ প্রায় হাজারের অধিক গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটির অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। মধুমতির বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে মামলা চলমান আছে। আমরা তার সকল সম্পদ পর্যালোচনা করে গ্রাহকদের জামানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি।

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর