মুন্সীগঞ্জের সদরের তেলের বিল এলাকায় মাত্র ৮০০ টাকা পুঁজি নিয়ে গার্মেন্টসের ব্যবসা শুরু করেছিলেন আমির হোসেন। ১৯৮২ সালে নিজ বাড়ি গার্মেন্টেসটি দেওয়ার পর থেকে কঠোর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে আজ তিনি কোটি টাকার মালিক।

এখন তার গার্মেন্টেসে কাজ করছেন ১৩ জন শ্রমিক। তার গার্মেন্টেসে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক থ্রিপিস। যা তিনি বিক্রি করছেন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমির হোসেন নিজ নামে দিয়েছেন গার্মেন্টসটি। বসত ঘরের পাশেই আলাদা একটি ঘরে তার গার্মেন্টেসে কাজ করছেন ১০ জন শ্রমিক। তিনি নিজেই তৈরি পোশাক বান্ডিল করছেন। ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততার শেষ নেই তাদের। সেলাই মেশিনে কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা বলেন, এখন তারা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কাজ করছেন। বিশেষ করে গত এক মাস যাবৎ তাদের এভাবেই কাজ করতে হচ্ছে। এর আগে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করতেন তারা। এসব শ্রমিকরা সাধারণত ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে থাকেন। কেউ প্রডাকশনের কাজ করেন। প্রডাকশনে যারা কাজ করেন তারা জানান, এখন তারা প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার কাজ করছেন।

আমির হোসেন গার্মেন্টেসের শ্রমিক মোবারক হোসেন বলেন, আমি ১০ বছর যাবৎ এই কারখানায় কাজ করি। শুধু করোনাকালীন আমাদের অনেক সমস্যা হয়েছে। ওই সময় পুরো গার্মেন্টস বন্ধ ছিল। পরিবার নিয়ে আমরা বিপাকে ছিলাম। তারপরেও মালিক আমাদের সংসার চালিয়ে রেখেছে। এখন পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে আমরা এখন ভালো আছি।

আরেক শ্রমিক আসলাম হোসেন বলেন, আমি এই ফ্যাক্টরিতে ২০ বছর যাবৎ কাজ করি। আমি প্রোডাকশনে কাজ করি। এখন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা প্রতিদিন কাজ করতে পারি। গত ২০ বছর কাজের মধ্যে করোনাকালীন খুব খারাপ ছিলাম। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছি।

আমির হোসেন গার্মেন্টেসের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৯৮২ সালে মাত্র ৮০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এরপরে এই ব্যবসা করে আমি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ গড়েছি। ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মূলধন আছে। এর বাইরেও আছে আমার গার্মেন্টস ও যন্ত্রপাতি। ব্যবসার শুরু হতে ভালোই ছিলাম। কিন্তু করোনায় খুব খারাপ সময় গেছে। আমার গার্মেন্টস পুরো বন্ধ ছিল। করোনার পর আবার পুরোদমে শুরু করছি। এ বছর ব্যবসা খুব ভালো চলছে। এক কোটি টাকার উপরে পণ্য এবার বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, তেলের বিল এলাকায় আগে ৪৫টি গার্মেন্টস ছিল। কিন্তু করোনায় এসব মিনি গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন এই এলাকায় ২০ থেকে ২৫টি গার্মেন্টস রয়েছে। এই এলাকায় প্রতি বাড়িতে বাড়িতে গার্মেন্টস। মূলত স্বাধীনতার পর থেকেই এই এলাকায় গার্মেন্টস ব্যবসার শুরু। বাড়িতে নিজেদের উদ্যোগে বিস্তার লাভ করতে থাকে ব্যবসাটি। এখন আমাদের তেলের বিল ও তার আশেপাশের বাড়িগুলোতে শত শত গার্মেন্টস হয়েছে। আমরা প্রথমে ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে নিয়ে আসি। তারপরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের থ্রিপিস তৈরি করি। পরে ঢাকা, নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন পাইকারদের কাছে গিয়ে বিক্রি করি। আমার ঢাকায় অনেক পাইকার রয়েছে। পোশাক তৈরি করার পরে বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে দিয়ে আসি।

স্থানীয় পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শহিদুল ঢালী বলেন, আমি ওই এলাকার আমির হোসেন গার্মেন্টসের মালিককে চিনি। অনেকেই এই ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার শাঁখারি বাজার, সুজানগর, সিপাহিপাড়া, তেলের বিল, গোয়লঘূর্নি এলাকার ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০০ মিনি গার্মেন্টস। এসব গার্মেন্টেসে কাজ করেন প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক। ঢাকার ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে এসব গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি শেষে রাজধানীর বড় বড় বিপণি বিতানে সরবরাহ করা হয়। ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জের এ গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি মিনি গার্মেন্টস কারখানা। কম্পিউটারাইজড অ্যামব্রয়ডারি মেশিন ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে চমৎকার সব ডিজাইন। এরপর কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে বাহারি পোশাক।

ব.ম শামীম/আরকে