বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে পটুয়াখালী অন্যতম। দেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বসবাস করে হাজারো জেলে পরিবার। শহর কিংবা গ্রাম, এই এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ মানুষেরই কোনো ধারণা নেই আবহাওয়ার সতর্ক সংকেত প্রদর্শনে কখন কয়টি পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এরপর এ বছর পতাকা প্রদর্শন করে উপকূলবাসীকে সতর্ক করতে আবহাওয়ার সতর্ক সংকেতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। এতে নতুন করে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এমনিতেই আবহাওয়ার সতর্ক সংকেত সম্পর্কে ভ্রান্ত ও অস্পষ্ট ধারণার কারণে দুর্যোগের সময় উপকূলে বেড়ে যায় ক্ষতির পরিমাণ। তার উপর এমন পরিবর্তন আনায় নতুন করে সর্বমহলে প্রশিক্ষণের জোরালো দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগে যেখানে সমুদ্রে ঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে একটি পতাকা উড়িয়ে ১ নম্বর সংকেত বোঝানো হতো, এখন সেখানে ঝড় সৃষ্টি হয়ে তা বন্দরের দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে একটি পতাকা উড়িয়ে বোঝানো হয় ৪ নম্বর সংকেত।

আবার ৩ নম্বর সংকেতেই আগে যেখানে দুইটি পতাকা উড়ত, এখন ৫ থেকে ৭ নম্বর সংকেতে উড়বে দুইটি পতাকা। এমনকি, আগে ৭ নম্বর সংকেতেই তিনটি পতাকা উড়ালেও এখন তিনটি পতাকা উড়বে ৮ থেকে ১০ নম্বর সংকেতে।

দুর্যোগকালীন সময়ে মূলত সমুদ্রবন্দরে ১১টি ও নদীবন্দরে ৪টি সংকেতের মাধ্যমে আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়। নদী ও সমুদ্রবন্দর কেন্দ্রিক এমন দ্বিমুখী সংকেত দেওয়ায় বিভ্রান্তি বেড়েছে উপকূলবাসীর মধ্যে।

২০০৭ সালের প্রলয়ংকর ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিপর্যস্ত লতাচাপলী ইউনিয়নের নুরুল হক, রাজ্জাক সিকদার, নুর আলম হাওলাদার, বকুল বেগম, মমতাজ বেগমসহ একাধিক এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমনিতেই সঠিক সময়ে আবহাওয়ার সংকেত পাওয়া যায় না। তারপর আবার এখন সংকেতের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন তারা। বর্তমান আবহাওয়া সংকেত সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই বলে দাবি তাদের।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কলাপাড়ার ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভার দলনেতা মো. শফিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংকেতের পরিবর্তনে কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ। কারণ, এখনো শতভাগ সচেতন নয় এখানকার মানুষ। উপকূলের বেশির ভাগ মানুষই দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে বসবাস করছে। খেটে খাওয়া মানুষের বসতঘরের অবস্থা খুবই নাজুক। তাই দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হন তারা। এরমধ্যে আবার আবহাওয়ার সংকেতের পরিবর্তন হয়েছে, এর কারণে সামনের দিকে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহতের সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

এবিএস