সুনামগঞ্জে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সদর উপজেলার দেখার হাওরের শিয়ালমারা অংশের কাঁচা ধান। চোখের সামনে কাঁচা ধান তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা ছাড়া কিছু করতে পারছেন না কৃষকরা। বুড়িস্থল, ডোপিকোনা, ফুলদিঘিরগাঁও, হাছননগর, কালিপুর, ইসলামপুরসহ অন্তত ২০টি গ্রামের কৃষকের জমি আছে এই হাওরে। বৃষ্টির পাশাপাশি পৌর শহরের ড্রেনের পানি এবং হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কারণে পানি বের না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখার হাওরের শিয়ালমারা অংশে গিয়ে দেখে যায়, হাওরের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে পানি জমে আছে। উঁচু জমিগুলোর ধান তলিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো ধান তলিয়ে যাবে যাবে এমন অবস্থা। ক্ষেত থেকে পানি বের করার জন্য জমির আইল কেটে দিয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু হাওর থেকে পানি বাহিরে বের হওয়ার সুযোগ না থাকায় পানি বের হতে পারছে না। নিচু জমির ক্ষেতের অবস্থা আরও খারাপ বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। 

জানা যায়, শিয়ালমারা অংশের জলাবদ্ধতার পানি বের হয় ইসলামপুর স্লুইচ গেটের মাধ্যমে। পানি অতিরিক্ত হওয়ায় গেট দিয়ে পানি নামতে দেরি হচ্ছে। পাশাপাশি আগে পুরো হাওরের পানি বের হতো শান্তিগঞ্জ উপজেলার উথারিয়া পাথারিয়া বাঁধে বসানো দুটো বড় রিং দিয়ে। সেটা বর্তমানে বন্ধ করে রাখা আছে। তাই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোলনের জন্য দ্রুত শান্তিগঞ্জের উথারিয়া পাথারিয়া বাঁধ দিয়ে পানি বের হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি কৃষকদের। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বুড়িস্থল গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দিন বলেন, পৌরসভার যত ড্রেন আছে সব ড্রেনের পানি আমাদের হাওরে যায়। এই ড্রেনের ক্ষতিকর পানি আমাদের হাওর ধ্বংসের অন্যতম কারণ। পানি জমে হাওরের কাঁচা ধান ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাখাওয়াত হাসান রাজীব বলেন, জলাবদ্ধতায় আমাদের হাওরের অবস্থা খারাপ। শান্তিগঞ্জের উথারিয়া পাথারিয়া বাঁধের পানি যাওয়ার স্থান বন্ধ করে দেওয়ায় পানি নামতে না পেরে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ বাঁধ দিয়ে পানি নামার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ইউএনও অফিসেও গিয়েছি। এখন যা করার তাদেরই করতে হবে। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল আলম বলেন, এই হাওরের পানি ইসলামপুর স্লুইচ গেটের মাধ্যমে নামে। স্লুইচ গেট খোলা আছে, পানিও নামছে। তবে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় পানি নামতে দেরি হচ্ছে। দুদিন বৃষ্টি না হলেই পানি কমে যাবে। উথারিয়া পাথারিয়া বাঁধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এটা কোনোভাবেই কাটা সম্ভব নয়। 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। এটি নিয়ে কাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি অফিস সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকেও জানাব। 

সোহানুর রহমান সোহান/আরএআর