কক্ষে তালা মেরে চাবি নিয়ে উধাও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাটবালিগাঁও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কক্ষে তালা মেরে দেড় মাস যাবত উধাও হয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা। দীর্ঘ দেড় মাসের অধিক সময় ধরে ওই কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীরা।
ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসে পরিকল্পনা পরিদর্শিকা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছিলেন নারগীস বেগম। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাকে ওই অফিস থেকে বদলি কার হয়। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি অফিস কক্ষে তালা মেরে উধাও হয়ে যান।
বিজ্ঞাপন
৬ মার্চ পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে মমতাজ বেগম নামে একজন যোগদান করলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে তিনি চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কক্ষে ঝুলে আছে তালা। অসংখ্য নারী রোগী বিভিন্ন গ্রাম থেকে এলেও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। মমতাজ বেগম নামের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা অফিসে উপস্থিত থাকলেও কক্ষ তালা মারা থাকায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তালাবদ্ধ কক্ষে থাকায় চিকিৎসা দিতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা শিউলি আক্তার বলেন, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমি প্রায়ই চিকিৎসা নিতে আসি। কিন্তু গত ১মাস ধরে এসে আমি চিকিৎসা পাচ্ছি না। এলেই দেখি কক্ষে তালা মারা। অন্য একজন যোগদান করলেও তিনি তালা মারা কক্ষে বসতে পারছেন না। আমি তার কাছে গেলে তিনি আমাকে কিছু চিকিৎসা দিয়েছেন আর বলেছেন আমার কাছে আপনাকে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। তাই আমি আপনাকে সব চিকিৎসা দিতে পারছি না।
সীমা নামের অপর এক রোগী বলেন, আমি তিনদিন এলাম। কিন্তু চিকিৎসা পেলাম না। এখানে চিকিৎসক থাকলেও তিনি বলছেন যন্ত্রপাতি সব তালা দেওয়া। তাই বাধ্য হয়ে সেবা না পেয়ে চলে যাচ্ছি।
ওই অফিসের একাধিক সূত্র জানায়, নার্গিস বেগমকে ওই পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে বদলি করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি কিছুতেই এ অফিস থেকে যেতে চাচ্ছেন না। এই অফিসে থেকে যেতে তিনি বিভিন্ন মহলের অফিস কক্ষ তালা মেরে রেখে দৌড়-ঝাঁপ দিচ্ছেন। দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে তিনি কক্ষে তালা মেরে আত্মগোপন করে আছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা নার্গিস বেগম বলেন, আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। ছুটি শেষ হলে এসে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাব।
নতুন যোগদানকারী পরিদর্শিকা মমতাজ বেগম বলেন, ডেলিভারি করার যন্ত্রপাতি, রেজিস্ট্রি খাতাপত্র, ফ্যামিলি প্ল্যানিং রেজিস্টার খাতাসহ সকল ধরনের সরঞ্জাম তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পূর্বে এখানে যিনি ছিলেন তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় আমি ঠিক মতো সেবা দিতে পারছি না। এখানে সেবা দেওয়া তো দূরের কথা আমি ঠিক মতো বসার টেবিলটাও পাচ্ছি না। অন্য একটি রুমে বসে চিকিৎসা দেই। ওই রুমের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা যখন আসে তখন বাইরে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা দিতে হয়।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ওখানে যিনি আগে ছিলেন তাকে বদলি করা হয়েছে। উনার মনে হয় বদলি করাটা পছন্দ হয়নি। তাই তিনি দীর্ঘদিন ওই কক্ষে তালা মেরে আত্মগোপনে আছেন। আমরা নার্গিস বেগমকে অনেকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু উনি ফোন রিসিভ করেননি। উনাকে রেজিস্ট্রি করে চিঠি পাঠিয়েছি, উনি চিঠিও রিসিভ করেননি। আইন অনুযায়ী আমরা তালা ভাঙতে পারি না । তালা ভাঙতে হলে কিছু নিয়ম কানুন আছে। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
ব.ম শামীম/এনএফ