নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে দুস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চেয়াম্যানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিমাসে চাল নিয়েছেন ওই জনপ্রতিনিধির ছোট ভাইয়ের বউও।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়াম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকারি নিয়ম অমান্য করে নিজের স্ত্রী মনিফা বেগম ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আকতারা বেগমের নামে দুস্থ নারীদের সুবিধাভোগী ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্ড করে দেন। সেই কার্ডে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল তোলেন তারা। জনপ্রতিনিধির স্ত্রী ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর ভিডব্লিউবির চাল তোলার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী বাছাই করা হয়। তাদেরকে কার্ড ও তিন মাসের চালও দেওয়া হয়। চাঁদখানা ইউনিয়নে কর্মসূচিটিতে উপকারভোগী রয়েছে ৩৫৫ জন। উপকারভোগীর তালিকার ২৬নং ক্রমিকে নাম রয়েছে মনিফা বেগম, স্বামীর নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে একই তালিকার ২৮নং ক্রমিকে নাম রয়েছে আকতারা বেগম, স্বামীর নাম মো. আলমগীর আলী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনিফা বেগম ওই ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। আর আকতারা বেগম ওই জনপ্রতিনিধির ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। এদিকে প্যানেল চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আলমগীর আলী তিনতলা বাড়ি নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। যা ইতোমধ্যে একতলার কাজ শেষের দিকে। জমি-জমাও রয়েছে বেশ।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কার্তিক মাসে এ তালিকা করা হয়েছে, আর আমিতো কয়দিন হলো দায়িত্ব নিলাম। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই তালিকা হয়েছে। কিভাবে তাদের নাম তালিকায় আছে জানি না। আমি কি চেয়ারম্যান-মেম্বার হয়ে ভুল করলাম নাকি? আমি ইউএনও স্যারের কাছে আমার স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের বউয়ের নাম থাকার কথা স্বীকার করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি মারা যাওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব নেন। প্যানেল চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষমতা পেয়েছেন, তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের বউয়ের নাম দিয়েছে তালিকায়।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিকুন্নাহার বলেন, উপজেলায় ৩ হাজার ৪৪৭ জন এ সুবিধা ভোগ করছে। ইউনিয়ন কমিটি থেকে তালিকা আসার পর উপজেলা কমিটি সেটি দেখে অনুমোদন দেয়। প্যানেল চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও তার ভাইয়ের স্ত্রী উপকারভোগী হলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। দ্রুত ওই নাম দুটি তালিকা থেকে বাতিল করে ওই প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, এ কর্মসূচিটি আগে দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) নামে পরিচিতি ছিল। কিন্তু বর্তমান এ কর্মসূচির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) অর্থাৎ দুস্থ নারীদের সুবিধা (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচি। এতে অস্বচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, নিম্নআয় করা ব্যক্তিসহ দুস্থদের অর্ন্তভূক্ত করা হয়। তারা প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পায়। এর ফলে দেশের গ্রামীণ দুস্থ নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি বৃহত্তর সামাজিক নিরাপত্তামূলক জোরদার হবে। যা নারীদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পুষ্টিহীনতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করে আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

শরিফুল ইসলাম/আরকে