৪২ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জেকা বাজারের এমডিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
জাবিউল্লাহ খান জাবের
রাজবাড়ীতে সাড়ে তিন হাজার গ্রাহকের ৪২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জেকা বাজার লিমিটেড। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাবিউল্লাহ খান জাবেরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজবাড়ী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কোরবান আলী সরকার বাদী হয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সদর থানায় মামলাটি করেন।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআইডির উপপরিদর্শক মো. কোরবান আলী সরকার।
আসামিরা হলেন- জেকা বাজার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার গঙ্গানন্দপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে জাবিউল্লাহ খান জাবের, পরিচালক পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের মুরারীপুর মন্ডলপাড়ার আব্দুল গণি শেখের ছেলে সাইদুল বাশার ওরফে বাবু, খলিলপুর গ্রামের আবুল কালাম সরকারের ছেলে আনিসুর রহমান, রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের বোয়ালমারি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল মোল্লার ছেলে মো. ইশানুর রহমান, ভবদিয়ার জোহান আলী শেখের ছেলে এসএম রাশিদুল ইসলাম কনক, বালিয়াকান্দির শামুকখোলা গ্রামের সেকেন আলীর ছেলে আব্দুর রহিম, তেনাই গ্রামের সেকেন আলীর ছেলে নায়েব আলী, সোনাপুরের মোয়াজ্জেম হোসাইনের ছেলে আনিসুর রহমান, কালুখালী রতনদিয়া ইউনিয়নের রুপসা গ্রামের মোতালেব প্রামাণিকের ছেলে মিলন প্রামাণিক, রতনদিয়ার আব্দুল মান্নান ব্যাপারীর ছেলে শাহ ফিরোজ আহমেদ, গঙ্গানন্দপুরের আকবর আলী শেখের ছেলে শুকুর আলী শেখ ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ও বোন রুকাইয়া খাতুন, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপের মধ্য হরিশপুর গ্রামের আবুল বাশার সওদাগরের ছেলে রাসেল সৈকত ও মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার ক্ষুদ্রচরের সাহেবরাপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের রোদায়ানুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, রাজবাড়ী শহরের পান্না চত্বরের নান্নু টাওয়ারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা খোলে জেকা বাজার লিমিটেড। এছাড়াও পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ছোট ছোট অফিস খুলে তারা ব্যবসা শুরু করেন। লাখে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য সংগ্রহ করা হতো এই প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া সদস্যদের স্বল্পমূল্যে মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, প্রসাধনী সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য দেওয়ার কথা বলেও নেওয়া হতো মোটা অংকের টাকা। লোভে পড়ে এ প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন অনেকেই।
২০২১ সালের ২ নভেম্বর রাজবাড়ী শহরের নান্নু টাওয়ারে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় রাজবাড়ী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে নকল পণ্য বিক্রি ও ই-কমার্স ব্যবসার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাবিউল্লাহ খান জাবের। বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন জেলায় খোলা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়গুলোও। একই বছরের ১৫ নভেম্বর ভুক্তভোগী গ্রাহক প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জাবিউল্লাহ খান জাবেরকে প্রধান আসামি করে মোট চারজনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় প্রতারণা মামলা করেন।
১০ মাস পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ১৬ জুলাই ফরিদপুর শহরের আলীপুর থেকে জাবিউল্লাহ খান জাবেরকে গ্রেপ্তার করে রাজবাড়ী সিআইডি। গ্রেপ্তারের পরদিন ১৭ জুলাই জাবেরকে নিয়ে রাজবাড়ী শহরের নান্নু টাওয়ারে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। সেসময় সেখান থেকে বেশ কিছু মালামাল জব্দ করা হয়।
এদিকে কালুখালী উপজেলার গঙ্গানন্দপুর গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ছেলে জাবিউল্লাহ খান জাবেরকে অনৈতিক কার্যকলাপ ও মাদক সেবনের অভিযোগে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন তার বাবা শুকুর আলী। একইসঙ্গে রাজবাড়ী আদালতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমেও ত্যাজ্য ঘোষণা করেন।
মামলার বাদী রাজবাড়ী সিআইডির উপপরিদর্শক মো. কোরবান আলী সরকার বলেন, ২০২১ সালে ভুক্তভোগী গ্রাহকের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। তদন্তে দেখা যায় সাড়ে তিন হাজার গ্রাহকের ৪২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে জেকা বাজার লিমিটেড। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাবিউল্লাহ খান জাবেরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় সিআইডির পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলাটিও সিআইডি তদন্ত করবে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকের দায়ের করা আগের মামলায় জাবিউল্লাহ খান জাবের বর্তমানে জামিনে আছেন বলেও জানান তিনি।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর