তিস্তাপাড়ে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়
দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ও ব্যারেজ সংলগ্ন নদীর পাড় দিন দিন দর্শনীয় স্থান হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আর ঈদ এলেই তিস্তাপাড়ে হাজারও দর্শনার্থীর পদচারণা বেড়ে যায়। এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপদাহের পর স্বস্তি খুঁজতে তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় ছুটে আসছে মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে তিস্তার বুকে স্পিডবোট ও লাল-নীল কাপড়ের ছাউনি লাগানো বেশ কয়েকটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্পিডবোটে কেউ কেউ ছুটে চলছেন। কেউ নৌকায় বন্ধুদের নিয়ে ভাসছেন নদীতে। কেউ কেউ ব্যস্ত মোবাইল ফোনে সেলফি আর ভিডিও ধারণ করতে।
বিজ্ঞাপন
রংপুর থেকে নীলফামারীর জলঢাকা হয়ে তিস্তা ব্যারেজের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। ব্যারেজের অদূরেই বাসস্ট্যান্ড, যেখান থেকে হেঁটে বা ভ্যান-রিকশাযোগে সহজেই নদীপাড়ে যাওয়া যায়। মূল অবকাঠামো লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় হলেও ব্যারেজটি ডালিয়া নামক স্থানের মধ্য দিয়ে নীলফামারী জেলাকেও সংযুক্ত করেছে।
রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে তিস্তাপাড়। সব বয়সী মানুষের ভিড় জমলেও এখানে আসা সিংহভাগই তরুণ-তরুণী।
বিজ্ঞাপন
দর্শনার্থীরা জানান, গত কয়েকদিনের দাবদাহে প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত। তাই ঈদ উপলক্ষ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে তিস্তা ব্যারেজে ঘুরতে এসেছেন তারা।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে আসা মমতা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমবার এসেছি, রাস্তায় জ্যামের কারণে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখানে এসে অনেক আনন্দই পাইলাম। শুরুর দিকে মন ভেঙ্গে গেলেও পরে অনেক কিছু দেখলাম, ভালো লাগছে, মজা পাচ্ছি, ঘুরলাম অনেক ভালো লেগেছে। গরিব মানুষ হিসেবে মিনি কক্সবাজার মনে হলো আমার কাছে।
নাঈম ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপদাহের পর একটু স্বস্তি খুঁজতে এখানে আসা। এখানকার পরিবেশটা অনেক সুন্দর। আমার বাচ্চাদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি, যাতে করে বাচ্চারা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
দিনাজপুর থেকে ঘুরতে আসা সুমন ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, উত্তরবঙ্গের মধ্যে তিস্তা ব্যারেজ হলো অন্যতম সুন্দর জায়গা। চিন্তা করলাম যে বসে না থেকে একটু ঘুরে আসি। পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে চলে এসেছি। অনেক ভালো সময় কাটলো, মনটাও এখণন ফ্রেস ফ্রেস লাগছে।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানা থেকে ঘুরতে আসা নওশীন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার কারণে গ্রামাঞ্চলে ঠিকভাবে ঘুরতে পারিনি। সবাই মিলে একত্রিত হয়ে তিস্তা ব্যারেজ ঘুরতে এসেছি। অনেক ভালো লাগলো। এত মানুষ হয়েছে, আমার জীবনে ব্যারেজে এত মানুষ প্রথম দেখলাম।
নুর আলম নামে আরেক দর্শনাথী বলেন, তিস্তা ব্যারেজ এমন জায়গা যেখানে সপরিবারে ঘুরতে আসা যায়। অনেক সুন্দর পরিবেশ যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার জীবনে এত লোকের সমাগম এই প্রথম দেখলাম। ব্যারেজ এলাকাও অনেক সুন্দর হয়েছে। পার্ক নির্মাণ, বিজিবি ক্যাফেসহ অনেক কিছু নতুন সংযোজন হয়েছে।
ব্যারেজ এলাকার দোকানদার নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত একমাস ব্যারেজ এলাকা প্রায় জনশূন্য ছিল। কিন্তু ঈদের প্রথম দিনে হঠাৎ করে এত লোকের সমাগম হয়েছে যা বলার বাইরে। আমার দেখা এই প্রথম ব্যারেজে এত লোকের সমাগম হয়েছে। আমার যে মালামাল এনেছিলাম তা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। অথচ আগে তিনদিনেও সেগুলো বেচতে পারতাম না।
দোয়ানী আনসার ক্যাম্পের সহকারী কমান্ডার আশিকুর রহমান আশিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে ঘুরতে আসা মানুষদের অবাধে চলাফেরার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার সবটাই করার চেষ্টা করছি আমরা। পুলিশও এখানে কাজ করছে।
লালমনিরহাট জেলা পুলিশের দোয়ানী ফাঁড়ি ইনচার্জ দীপ্ত কুমার সিং ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে পুলিশ, আনসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ টহল দিচ্ছে কিন্তু হঠাৎ করে দুপুরের পর মানুষের ঢল নামে। এজন্য নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়েছে, হিমশিম খেতে হয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকজনকে নিরাপদে ব্যারেজ দেখার জন্য ব্যবস্থা করেছি।
ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে এত লোকজনের সমাগম ছিল না। এবারে ঈদে উৎসবে এত সমাগম হয়েছে তা বলার বাইরে।
শরিফুল ইসলাম/এবিএস