ফায়েজ-এমদাদের পরিবারে চলছে মাতম
মোহাম্মদ ফায়েজ ও এমদাদুল হক
ফুটফুটে শিশু সাবিকা বিনতে ফায়েজ। ডাক নাম মানহা। বয়স আট মাস। পরিচিতজনদের কোলে কোলে ঘুরেছে সে। আনন্দও করছে অন্য শিশুদের পেলে। কিন্তু এই শিশুটি বুঝতে পারছে না পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশ্রয় সে হারিয়েছে। মা সুইটি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
অন্যদিকে দুদক কর্মকর্তা এমদাদুল হক মল্লিকের ছয় বছর বয়সী ছেলে আরাফ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মায়ের কান্নায় সেও গিয়ে মুখ লুকায় মায়ের বুকে। খুঁজে বেড়ায় বাবাকে। বাবার প্রসঙ্গ উঠলেই তার কবর দেখিয়ে দেয় হাত তুলে।
বিজ্ঞাপন
ঈদের দিন শনিবার (২২ এপ্রিল) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশের এসআই মোহাম্মদ ফায়েজ ও দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জ কার্যালয়ের প্রধান করণিক এমদাদুল হকের বাড়িতে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। দুই পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
ফায়েজের মামা শ্বশুর ইলতুতমিশ বলেন, জন্ম থেকেই মানহার কিডনিতে সমস্যা। ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর পর বলেছিল কিডনিতে পানি জমেছে। ফায়েজ বাড়িতে এলে সব সময়ে মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। মেয়েটা ওর প্রাণ ছিল। এখন মেয়েটার কী হবে সেটাই চিন্তা।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হলে মানহার অপারেশনের কথা ছিল। সব প্রস্তুতিও নিয়েছিল ফায়েজ। কিন্তু তার আগেই চিরবিদায় নিল।
আল আমিন নামে এক স্বজন বলেন, আমার মামাতো ভাই এমদাদুল হক এবং খালাতো ভাই ফায়েজ। দুইজন একই সঙ্গে বাসচাপায় মারা গেছেন। তাদের দুজনেরই ছোট্ট দুটি সন্তান রয়েছে। ফায়েজের মেয়ের বয়স আট মাস। আর এমদাদুলের ছেলে আরাফের বয়স ছয় বছর। আমরা ওদের শোকে ভেঙে পড়েছি। এই দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
তিনি বলেন, এমদাদুল ও ফায়েজ দুজনেই অসহায়দের জন্য কাজ করেছে। যখন যতটুকু পেরেছে সাহায্য করেছে মানুষকে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, নিহত ফায়েজ ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং মানবিক মানুষ। তার মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা ঘাতকদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি। আগামী ২৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করব। এছাড়া নিহতদের পরিবারকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লা আল বারী বলেন, বাসচাপায় পুলিশের এসআই ও দুদক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের স্বজনরা বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে সড়ক আইনে থানায় মামলা করেছেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে বরিশাল-ঝালকাঠি আঞ্চলিক মহাসড়কের রুপাতলী বসুন্ধরা হাউজিং গেট সংলগ্ন সড়কে ফায়েজ ও এমদাদুলকে বহনকারী মোটরসাইকেলকে চাপা দেয় বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা হিমেল পরিবহন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ফায়েজ। আর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে মারা যান দুদক কর্মকর্তা এমদাদুল। রোববার বিকেলে নিজ নিজ গ্রামে দুজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের দুজনের বাড়িই ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর