নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলে ককটেল মারতে বাধা দেওয়ায় বাড়িতে ঢুকে এক পোল্ট্রি মুরগি ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যার প্রায় ৪২ ঘণ্টা পর মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে ঈদের দিন (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামে নিজ বাড়িতে ঢুকে জুলহাস মিয়া (২৮) নামে এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। ওই সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় সাদ্দাম, ইয়ামিন, হাবিব, আমিনুল, রাইজউদ্দিনসহ ছয়জন। তারা ঢাকা ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
 
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ৪২ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নিলক্ষা বীরগাঁও গ্রামে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর আজ সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নিহত জুলহাসের বাড়িতে খোঁজখবর নিতে গেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, নরসিংদী পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম (পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অর্নিবাণ চৌধুরী, (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন, রায়পুরা থানার ওসি আজিজুর রহমানসহ পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
 
নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় রায়পুরার নিলক্ষার হরিপুর গ্রামের জজমিয়ার ছেলে জিয়া, আরিফ, সোলমান, মামুনসহ বেশ কয়েকজন যুবক বীরগাঁও গ্রামের সামসু মিয়ার ছেলে জুলহাসের মুরগির ফার্মের সামনে ককটেল ফাটাতে থাকে। ওই সময় নিহত জুলহাস তাদের ককটেল ফাটাতে বারণ করেন। এতে তারা জুলহাসের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে তারা দলবল নিয়ে জুলহাসের বাড়িতে ঢুকে জুলহাসকে গুলি করেন। এ সময় তার স্বজনরা বাধা দিতে আসলে তাদেরও গুলি করে। পরে তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক জুলহাসকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ ৪ জনকে ঢাকায় ও নরসিংদীর একটি হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

হত্যার ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ২০/৩০ জনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে হত্যাকাণ্ডের ৪২ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

নিহতের ফুপাতো ভাই সোহেল মিয়া বলেন, আমরা নিলক্ষা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো মানুষের মধ্যে গত ৫০ বছরেও কোনো ধরনের ঝগড়া-বিবাধে জড়িত ছিল না। সব সময় ঝগড়া-বিবাধকে ঘৃণা করে আসছি। কিন্তু ককটেল মারতে বাধা দেওয়ায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের সন্ত্রাসীরা এসব করেছে। এ সময় হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে প্রকাশ্যে জুলহাস মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে। 

নিহতের মামা আজান মিয়া বলেন, আমরা কখনো ঝগড়া পছন্দ করি না। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। 

রায়পুরা থানার ডিউটি অফিসার এসআই আরিফ রাব্বানি বলেন, নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

তন্ময় সাহা/এমএ