নওগাঁয় পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার প্রায় সবকটি মাঠে ধানের ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর বাম্পার ফলন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ১ লাখ ৮৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৫০ হেক্টর। যেখানে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪১ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এ বছর জিরাশাইল, কাটারী, সম্পা কাটারী, ব্রি-ধান-২৮, ২৯, ৮১, ৮৬, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ জাতের ধানের আবাদ করেছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে ৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। কোনো কোনো মাঠের ধান কেটে ঘরে নিচ্ছেন চাষিরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা থাকায় ফসল ঘরে তুলতে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত দলবেধে মাঠে নেমে ধান কাটছেন চাষিরা। তবে, প্রায় সব মাঠের ধান একসঙ্গে পাকায় বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাণীনগর উপজেলার ত্রি-মোহনী হাট এবং মান্দা উপজেলার সতিহাট বাজারে সদ্য কাটা মাড়াইকৃত ধানের মধ্যে মানভেদে প্রতি মণ জিরাশাইল ১ হাজার ৬০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০ টাকা, কাটারী ১ হাজার ১৪০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ব্রি-ধান-২৮- ১ হাজার ৪০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০ টাকা এবং সম্পা কাটারী ১ হাজার ৪০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলার দাউদপুর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, ৫ বিঘা জমিতে জিরাশাইল ধান আবাদ করে ১৩০ মণ ফলন পেয়েছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকায় ঈদের দিনেও ধান কাটতে হয়েছে। এবার ধানের ফলন বেশি হওয়ায় কমবেশি প্রত্যেকের বাড়িতে ঈদে আত্মীয় স্বজনদের আগমন বেড়েছে। ধানের বাম্পার ফলন এবং বাজারদর ভালো হওয়ায় খরচ করতে গিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে না।

নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের গুমারদহ গ্রামের কৃষাণী আনোয়ারা বেগম বলেন, গুটিয়ার বিলে ২৭ কাঠা জমিতে জিরাশাইল জাতের ধানের আবাদ করে ৩৩ মণ ফলন পেয়েছি। কাটা-মাড়াই শেষে ১৩ মণ ধান নিজেদের খাবার জন্য রেখে বাকি ২০ মণ ধান স্থানীয় বাজারে ১ হাজার ৮০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। ঈদের ৩ দিন আগে ২১ হাজার ৬০০ টাকার ধান বিক্রি করতে পারায় ঈদের খরচ উঠে এসেছে। যা আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দকে দ্বিগুন করেছে।

একই উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর সরদারপাড়া গ্রামের কৃষক আহসান হাবিব বলেন, ৯ বিঘা জমিতে কাটারী জাতের ধানের আবাদ করেছি। ধান কাটার উপযোগী হতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে। আশেপাশের জমিতে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রত্যেকে কমপক্ষে ২৩ থেকে ২৭ মণ করে ফলন পাচ্ছে।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় সদ্য কাটা ধান অনেকটা শুষ্ক অবস্থায় থাকছে। ধানের আদ্রতা বিবেচনায় চাষিদের ভালো দাম দিয়ে এসব ধান কেনা হচ্ছে। গুণগত মান বিবেচনায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ মৌসুমে ১ হাজার ১০০ টাকার কমে কোনো ধান পাওয়া যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র দাবদাহের সময় চাষিদের প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। সঠিক সময়ে কৃষি পরামর্শ দেওয়ায় তাপদাহে জেলার কোনো মাঠের ফসলেরই ক্ষতি হয়নি। এখন প্রায় সবকটি মাঠের ধান শক্ত দানা হয়ে গেছে। তাপমাত্রা আবারও কমতে শুরু করেছে। তাই নতুন করে তাপদাহে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, ২ সপ্তাহ ধরে ধান কাটা এবং মাড়াই শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ শতাংশ জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। বাজারে ভালো দাম থাকায় ঈদের মধ্যেও উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কর্তন করছে চাষিরা। নীলফামারী, সৈয়দপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা আসছেন। এছাড়া কৃষি যন্ত্রসেবা কেন্দ্র সচল করা হয়েছে। তাই শ্রমিক সংকটে ধান কাটা বিলম্ব হবে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারলে ধান উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

এবিএস