‘শ্রমিকদের প্রায় ৪৪ কোটি টাকা মেরে দিয়ে তারা দামি গাড়ি কিনেছেন, আর শ্রমিকরা ভাত পাচ্ছে না। সর্দারদের কাছে টাকা চাইলে দিচ্ছে মামলার হুমকি। শ্রমিক দেখে কি আমাদের মূল্য নেই? আমরা সর্দারের কাছে জিম্মি থাকতে চাই না। আমাদের পাওনা টাকা ফেরত দিন।’ এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রমিক আমিনুর ইসলাম।

শ্রমিকদের পাওনা ৪৪ কোটি টাকা পরিশোধের দাবিতে সোমবার (১ মে) দুপুরে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ব্যানারে স্থলবন্দর সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এ সময় তিনি এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর আমাদের উপর অন্যায় করে তারা বড়লোক হচ্ছে, তবুও আমরা কিছু বলতে পারছি না। ঈদে সন্তানদের  কোনো ভালো কাপড় কিনে দিতে পারিনি এর চেয়ে বড় কষ্ট কি হতে পারে। আর ঈদের খাবারের কথা কি বলব, মানুষের ঘরে ঘরে সুস্বাদু খাবার। আর শ্রমিকদের ঘরে কোনো খাবার খেতে পারে না।

বিক্ষোভ মিছিলের পর মানববন্ধনে বক্তরা জানান, দীর্ঘদিনের শ্রমিকের জমাকৃত পাওনা ৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ, ন্যায্য মজুরি প্রদান, নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক নেতা নির্বাচন, বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

তারা আরও জানান, একটি চিহ্নিত শ্রমিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে রেখেছে। নির্বাচন ছাড়াই বছরের পর বছর পুরনো কমিটি শ্রমিকদের সঞ্চয়কৃত অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছে। তাই অবিলম্বে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন ও সঞ্চয়কৃত টাকা ফেরতের দাবি জানান শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত-বাংলাদেশের ট্রাকের পণ্য লোড-অনলোডে করতে কাজ করছেন ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৎসামান্য মজুরী পরিশোধ করলেও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ভাতার তহবিলের নাম করে টাকা জমা রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টিই তাদের শ্রমিকদের পাওনা বকেয়া রাখেন।

জানা যায়, দীর্ঘদিনের পাওনা টাকা না দিয়ে কালক্ষেপন করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া শ্রমিকদের চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন তহবিলে নেওয়া শ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের মজুরির অংশের কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি। এভাবে শ্রমিকদের পাওনা বকেয়া পড়ে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। ২০১০ সালে নির্ধারণ করা দৈনিক দুইশত টাকা মজুরিতে ২০২৩ সালেও শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবি করলেও তা পূরণ করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

পরবর্তীতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কাজ ফেলে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর। ওই দিন দুপুরে পাটগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম মিঠু শ্রমিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ যোগ দেন। সন্ধ্যার মধ্যে আলোচনা করে পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা তাদের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু সেই আশ্বাসের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও কোনো সুফল পাননি তারা। এছাড়া একটি চিহ্নিত গ্রুপ শ্রমিকদের নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে আসছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

শ্রমিকদের বকেয়া রাখা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ড্রোপ কমিউনিকেশন লিমিটেড, মেসার্স আবতাহি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও হোসনে আরা এন্টারপ্রাইজ জেভি। তারা দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রাখে। এ নিয়ে শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করে। তবে, চলতি বছরের শুরুর দিকে এ তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বকেয়া নেই বলে জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শ্রমিকরা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বুড়িমারী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি সামছুল হুদা, সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজোয়ান হোসেন, শ্রমিক আমেনা বেগম, মনোয়ারা বেগম, হামিদুর রহমান ও আতোয়ার রহমান প্রমুখ।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এবিএস