কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও পেট্রোল ঢেলে বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ফারুক মণ্ডল (২২) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সকালে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

এনিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

মৃত ফারুক মণ্ডল দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামের মৃত দিনু মন্ডলের ছেলে। তারা বাবা দিনু মন্ডল ও প্রতিবেশী আক্তার মণ্ডল গত রোববার একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত আক্তার মণ্ডল (৪০) চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে এবং দিনু মন্ডল (৬৫) একই গ্রামের দবির মণ্ডলের ছেলে।

তাদের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাদের মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আকাশে বাতাসে শোকের মাতম। নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা। 

এঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশু মণ্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে জখম ও দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় মোজাম মণ্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই দিন রাতে ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব ও পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের পরেরদিন দুপুরে জামিন দিয়েছেন আদালত। জামিনের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা। এ মামলায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

মঙ্গলবার সকালে হত্যার প্রতিবাদ ও অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে দিনু ও আক্তারের মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নিহতের পরিবার, আহতদের পরিবার, তাদের স্বজন ও স্থানীয়রা। মানববন্ধনে প্রায় ৫ হাজার মানুষ অংশ নেন।

স্থানীয়রা জানান, পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশে প্রতিপক্ষের লোকজন মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রায় ২৫ জনকে গুরুতর আহত করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে বাবা-ছেলেসহ মোট তিনজন মারা গেছেন। আহত কয়েকজন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

এ বিষয়ে চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। প্রতিপক্ষের পেট্রোল বোমার আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। যে রাস্তা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। সেই রাস্তায় লাশের মিছিল হচ্ছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাদের সমস্যা নিয়ে আমি তিনবার বৈঠক করেছি, সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু একটা পক্ষ শান্তি ও সমাধান চায়নি। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মণ্ডলদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে তিনটি মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করল। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সবার শাস্তি চাই। আমি প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিলমারীর ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা গেছেন। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। এঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মণ্ডল গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়। সে সময় মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের ৫টি বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর জখম ও দগ্ধ হয়ে প্রায় ২৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। 

এদিকে কুষ্টিয়ায় গত কয়েকদিনে ৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে প্রতিপক্ষের আগুনে দগ্ধ তিনজনের মৃত্যু, ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন, মানসিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা, দুর্বৃত্তদের হাতে যুবক খুন এবং জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করে।

রাজু আহমেদ/আরকে