নেত্রকোনার বারহাট্টায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী মুক্তি রাণী বর্মণকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ঘাতক কাউছার মিয়াকে বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

অপরদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে গত বুধবার বিকেল ৫টার দিকে নিহত মুক্তি রাণী বর্মণের মরদেহ প্রথমে প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে মরদেহটি নিয়ে যাওয়া হয় মুক্তি রাণীদের বাড়িতে এবং সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে কংস নদীর তীরে তার দাহ কাজ সম্পন্ন করা হয়।

স্থানীয় বারহাট্টা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন কুমার সাহা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে বুধবার (৩ মে) দুপুরে নিহত মুক্তি রাণী বর্মণের বাবা নিখিল বর্মণ বাদী হয়ে কাউছারকে একমাত্র আসামি করে বারহাট্টা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর ওইদিন বিকেল পৌনে ৩টার দিকে প্রেমনগর গ্রামের পাকা ধান ক্ষেত সংলগ্ন একটি জঙ্গল থেকে কাউছারকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম। 

কাউছারকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, প্রেমনগর গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে কাউছার একই গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী মুক্তি বর্মণকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেম নিবেদন ও উত্যক্ত করে আসছিল। মুক্তি প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় বখাটে কাউছার ক্ষিপ্ত হয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মুক্তি বর্মণকে ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুক্তিকে উদ্ধার করে প্রথমে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করে। 

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পরপরই ঘাতক বখাটে যুবককে ধরতে জেলা পুলিশের পক্ষে ৪টি টিম ৪ ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে নামে এবং ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ ঘাতক কাউছারকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাউছার হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সংবাদ সম্মেলনে জানায় পুলিশ। 

এদিকে স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মাধ্যমে কাউছারের ফাঁসির দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং উপজেলা শিক্ষক সমিতির যৌথ আয়োজনে বারহাট্টা উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

মানববন্ধনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বারহাট্টা শাখার সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আফজল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ও কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বারহাট্টা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আজাদ, বাউসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামছুল হক, প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী, চল্লিশ কাহনীয়া হাফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন, চিরাম তাহেরা মান্নান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন আলম, রূপগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পুলক দত্ত, সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ মুজিব আহমাদ, প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক প্রদীপ কুমার শ্যামল, নিশ্চিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহনাজ পারভীন প্রমুখ।

মানববন্ধনে প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক প্রদীপ কুমার শ্যামল বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘাতক কাউছারকে গ্রেপ্তার করায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বখাটে কাউছারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি আমরা।

এছাড়া কাউছারের ফাঁসির দাবিতে একই দিন বেলা ১১টার দিকে নেত্রকোনা জেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আয়োজনে এবং দুপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নেত্রকোণা পৌরসভার সামনের সড়কে এবং দুপুরে জেলার আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী বাজারে জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোটের আয়োজনে মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মো. জিয়াউর রহমান/এমএএস