ইলিশ আহরণে গেলেও মিলছে না, নেই অন্য মাছও

দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরার সময় কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও ভোলায় মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না জেলেদের জালে। নদী থেকে অনেকটা খালি হাতে ফিরছেন ভোলার জেলেরা, উঠছে না খরচের টাকাও। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। 

জাটকা নিধন বন্ধে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ৩০ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে আবার নদীতে ইলিশ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। কিন্তু গত পাঁচ দিনেও কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে হতাশ ভোলার হাজারো জেলে। এছাড়া অন্য যে মাছ পাচ্ছেন তাও পরিমাণে অনেক কম। নৌকা নিয়ে দিনে ও রাতে নদীতে থেকে হাতেগোনা কয়েকটি মাছ নিয়েই মৎস্যঘাটে ফিরছেন অনেক জেলে।

মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় ভোলার সাত উপজেলায় ৪০৩টি অভিযান পরিচালনা করে ৩৬২ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। ৪৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০৩ জন জেলেকে ছয় লাখ ৮৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আটক বাকিরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সরেজমিন ভোলা সদরের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ইলিশা ঘাট, রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়া, তুলাতুলি জেলেপল্লি ঘুরে দেখা যায়, দলবদ্ধভাবে নদীতে ইলিশ ধরতে গিয়েও খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। আর যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন তা দিয়ে তাদের নৌকার জ্বালানি খরচও উঠছে না। ফলে দৈনন্দিন সাংসারিক খরচ মেটাতে গিয়ে নতুন করে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন বলে জানান জেলেরা।

ইলিশাঘাটের কালাম ও হাদিস মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ দুই মাস অলস সময় কাটানোর পর তারা নদীতে নামলেও তেমন ইলিশ মিলছে না। রাতভর জাল টেনে ১-৩ হাজার টাকার বেশি ইলিশ উঠছে না। এতে তেল খরচ এবং ৭-১৫ জন মাঝি মাল্লার খরচ পোষায় না।

কাচিয়া কাঠির মাথার জেলে দলু মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নি‌ষেধাজ্ঞার পর ভেবেছি মাছ পাব, গত দুই মাস যে ক‌ষ্টে ছিলাম মাছ পে‌লে হয়‌তো কষ্টটা কষ্ট ম‌নে হ‌তো না। কিন্তু যে পরিমাণ ইলিশ মাছ পাই তা একেবারেই সামান্য। এ দিয়ে তাে নৌকার তে‌লের খরচ ও‌ঠে না। আর সংসার চলে কী ক‌রে?

এদিকে পরিস্থিতি এমন থাকলে ইলিশ অবতরণে ঘাটতির পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি পড়বে বলে জানিয়েছেন ভোলা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, বর্তমানে অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের পরিমাণ খুবই কম। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সেই সঙ্গে আমাদের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও ঘাটতি পড়বে।

ভোলা সদর তুলাতুলি মাছঘাটে গিয়ে আড়তদার আল আমিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর দুই মাস বন্ধের পর ভোলা মেঘনায় জেলেদের মাছ শিকারের উৎসব শুরু হয়। শত শত নৌকায় হাজার হাজার জেলে ছোটেন মেঘনায়। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘাটে বেড়ে যায় ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম। জেলেপল্লিতে শুরু হয় আনন্দ উৎসব। কিন্তু এবারের চিত্র উলটো। পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও নদীতে আশানুরূপ মাছ পাচ্ছেন না তারা। 

আড়তদাররা আরো জানান, ইলিশের আমদানি কম থাকায় বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৭-৮শ গ্রামের ইলিশ প্রতিকেজি ১ হাজার ৭০০ টাকা ও ৫-৬শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫শ টাকায়। তবে মাছের আমদানি বাড়লে দাম কমে যাবে।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলেরা নদীতে গিয়ে আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছেন না। তবে নদীতে পানি বাড়লে ও ভারী বৃষ্টি হলে জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাবে বলে আমরা আশাবাদী।

আবহাওয়া পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে নদীতে মাছের দেখে মিলবে, তাই জেলেদেরকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
 
আবদুল হান্নান/জেডএস