মধুখালিতে ইউএনওর ওপর হামলার সময় যা ঘটেছিল
ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলার নিশ্চিন্ততপুর চরপাড়া গ্রামে গৃহহীনদের বসবাসের জন্য সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চেয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে সেই জমি নিজেদের মালিকানাধীন দাবি করে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। সেখানে গিয়ে মারধরের শিকার হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশিকুর রহমান চৌধুরী।
শুক্রবার (৫ মে) এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের। এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, নিশ্চিন্তপুর চরপাড়া গ্রামে ৫ একর জমি খাস আছে বলে দাবি করে আসছিল উপজেলা প্রশাসন। এজন্য সেখানে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। তবে ওই জায়গার মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এলাকাবাসীর দাবী, ওই জায়গার মালিক নিশ্চিন্তপুর ও পাশের একটি গ্রামের দুই-তিন ব্যক্তি। তবে এসব কৃষিজমি মূল মালিকের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতেন ওই গ্রামের বিভিন্ন কৃষক। এসব জমিতে মরিচ, পাট ও বেগুনের চাষ করা হয়। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে পেপেরও চাষ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তারা জানান, বৃহস্পতিবার (৪ মে) বেলা দেড়টার দিকে আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায় দুইশ গজ সামনে একটি কাচা রাস্তার উপর মানববন্ধনে দাঁড়ায় নারী শিশুসহ শতাধিক ব্যক্তি। ওই মানববন্ধন চলাকালে একদল পুলিশ ও নিজের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত আনসার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান মধুখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মানববন্ধনকারীদের সেখান থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেন। সেখান থেকে না সরায় তিনি তাদের সরিয়ে দিতে আনসার সদস্যদের নির্দেশ দেন। ইউএনওর নির্দেশ পেয়ে আনসার সদস্যরা প্রথমে ব্যানার টান দেন। তাতে বাধা দিলে মানববন্ধনকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন আনসার সদস্যরা।
এ সময় ওই মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিধবা নারী আইরিন বেগমকে (৪৬) শর্টগানের বাট দিয়ে মুখে বারি দেন এক আনসার সদস্য। এতে আইরিন বেগমের নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করলে মুহূর্তে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে পরে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। এ সময় রাস্তায় ছিলেন ইএনও ও তার নিরাপত্তা রক্ষীরা। দূরে ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। এ সময় ইউএনও দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য গাড়িতে উঠেন। তখন পেছন দিক থেকে নারীরা গাড়িতে হামলা করেন। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শর্টগানের চারটি এবং ইউএনওর দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা দুটি সিসার ও চারটি রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে ইউএনও, চালক, দেহরক্ষী, কাজের ঠিকাদার, চার নারী ও চার পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৫ জন আহত হন।
এ বিষয়ে মধুখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দুটি মামলায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানসহ চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মধুখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশিকুর রহমান চৌধুরীর মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছিলেন, সরকারি খাস জমিতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। এলাকার কয়েকজন ওই জমির মালিকানা দাবি করলেও এর স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
জহির হোসেন/এবিএস