ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একটি সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান পুলিশের তাড়া খেয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় নিজের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ও ব্যাগ রেখে পালিয়ে গেছেন।

ফলে ভাঙ্গা থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে তার প্রাইভেট কার, মুঠোফোন ও ব্যাগ জব্দ করে নিয়ে আসে। গত শুক্রবার (৫ মে) রাত ১টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্ট টোলপ্লাজা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) মো. হেলালউদ্দিন ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মামলা হওয়ার পরই মামলার ঘটনা জেনে যায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের ওই নেতা। পরে ওই নেতাকে ধরতে পুলিশের পাঁচটি দল আসামিদের ধরতে অভিযান চালায়। এ মামলার মূল আসামি মোখলেছুর রহমান পুলিশের জিপিএস ট্র্যাকিং এড়াতে মুঠোফোন বন্ধ করে ফেলেন। এরপর গোপন খবরে পুলিশ জানতে পারে তিনি ঢাকার দিকে যেতে পারেন। পরে পুলিশের অভিযানিক দল পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে পৌঁছালে মোখলেছুর রহমান টের পেয়ে যান। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে টোল প্লাজার এক পাশে গাড়িটি ফেলে সড়কের ডিভাইডার পার হয়ে পালিয়ে যান। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তার ফেলে যাওয়া প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। গাড়িতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও একটি ব্যাগও জব্দ করা হয়। এ সময় তার সহযোগী মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ভাঙ্গার সলিলদিয়া গ্রামের লাবু মাতুব্বরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ঈশ্বরদী গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাতুব্বর গোষ্ঠী ও তালুকদার গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ অনেক পুরনো। এই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই গতকাল শুক্রবার (৫ মে) বেলা ১১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের তিন শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশ নেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোখলেছুর রহমান আজিমনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোতালেব মাতুব্বরের ছোট ভাই। তিনি 'হাজি ইরফান উদ্দিন ফিলিং স্টেশন' স্টেশনের মালিক।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৯টার দিক ফারুক তালুকদারের তিন সমর্থক ইমরান তালুকদার (৩৫), শাওন বেপারি (২২) ও তিতাস তালুকদারকে মোতালেব মাতুব্বরের লোকজন ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের পুলিয়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে 'হাজি ইরফান উদ্দিন ফিলিং স্টেশন' ফিলিং স্টেশনের পেছনে একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এক পর্যায়ে ইমরানের বাম পায়ের রগ কেটে দেয় তারা। এ ঘটনায় দুই পক্ষেরে মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় ওই ফিলিং স্টেশনটি। ইমরান বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় আহত ইমরান তালুকদারের ভাই ইকবাল তালুকদার বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন শনিবার। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মোখলেছুর রহমানকে।

মামলায় ২৯ জনের নামসসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোখলেছুর রহমান মালিকানাধীন ওই পেট্রোল পাম্প থেকে ২টি রামদা, ৫৫টি তীর ও ১টি ধনুক জব্দ করে। এ মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার পর এজাহারভুক্ত আসামি  সলিলদিয়া গ্রামের লাবু মাতুব্বর (৩৫), আজিম নগর ইউনিয়নের ঈশ্বরদী গ্রামের ফারুক হাওলাদার (৩৫), আকতার মাতুব্বর (৩০), ইকবাল শিকদার (৩০), ওহিদ মাতুব্বর (৪৩) এবং সন্দেহ ভাজন আসামি হিসেবে ঢাকার লালবাগ থানার দুরিআংগুল মহল্লার মো. হোসেন খান (৩৫) ও মাদারীপুরের শিবচরের চর বাচামরা গ্রামের ফরহাদ হোসেনকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জুয়েল মিয়া বলেন, শনিবার বিকেলে গ্রেপ্তার হওয়া ওই সাতজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

জহির হোসেন/এমএএস