মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ সব সময় মনুষ্যত্বের জয়গান গেয়েছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। সংকীর্ণতার পথ থেকে মানুষকে মুক্তির দিকে আহ্বান করেছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁর পতিসরে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গণে দেবেন্দ্র মঞ্চে আয়োজিত তিন দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য ও কর্মজীবনে আমাদের অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করেছেন। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রেরণার উৎস। বর্তমান বিশ্বে চলমান যুদ্ধ-সংঘর্ষ মোকাবিলায় রবীন্দ্রনাথ হতে পারে বিশ্ববাসীর অন্যতম সহায়। বিশ্বব্যাপী মৌলবাদীদের উত্থান, জাতীয়বাদী শক্তির সংকীর্ণতা, শ্রেণি-বৈষম্য, জাতিতে জাতিতে হানাহানি বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে হৃদয়ে লালন করতেন বলে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ তার কবিতা ও প্রবন্ধে জাতির সংকট মোচনে এক মহামানবের প্রত্যাশ্যা করেছিলেন। বাঙালি জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধুই কবিগুরুর সেই মহামানব। জাতির দুর্দিনে সব সময় বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও কর্মে আশ্রয়  খুঁজেছেন। তাই কবিগুরু রচিত আমার সোনার বাংলা গানটিকে তিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছিলেন। রাজনৈতিক বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু প্রায়ই কবিগুরুর কবিতার পঙক্তি আবৃত্তি করতেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, পতিসরে রবীন্দ্রনাথের জীবনাচার থেকে শিক্ষা নেওয়ার গুরুত্ব পাওয়া যায়। পতিসরে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃষকদের উন্নয়নের জন্য কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করেছিলেন। এছাড়া পতিসর ও এর আশপাশের গ্রামের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে কবিগুরু আজও বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস।

আলোচনা অনুষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয় শিল্পীদর পরিবেশনায় কবিতা, গান, নাচ ও নাটক পরিবেশন করা হয়। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে কয়েক যুগ ধরে চলে আসা পতিসরে নাগর নদীর কূলে স্থানীয়দের আয়োজনে বসেছে তিন দিনের গ্রামীণ রবীন্দ্র মেলা। পতিসরে রথীন্দ্রনাথ গবেষণা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ মেলা কবিভক্তদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ আজম, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন, নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান, নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক প্রমুখ।

কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখবেন রবীন্দ্র গবেষক আবুল মোমেন। তৃতীয় দিন বুধবার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের। সমাপনী দিনে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার জি এস এস জাফরুল্লাহ। এছাড়া পতিসরে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠানে ঢাকা ও নওগাঁর স্থানীয় শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নৃত্য ও নাটক পরিবেশন করবেন।

আরমান হোসেন রুমন/এবিএস