ঠাকুরগাঁওয়ের প্রায় সব উপজেলাতে লিচু চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। এবারে আশানুরূপ লিচুর ফলন হলেও কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

সদর উপজেলার মুন্সিরহাট, আকচা, নারগুনের কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, তাপের কারণে অনেক লিচুতে ক্ষত দাগ হয়ে গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা থাকলেও লিচু পরিপক্ব করার  জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। প্রতিটি গাছের নিচে দেওয়া হচ্ছে সার ও সেচ। এক সপ্তাহের মধ্যে পরিপক্ব হয়ে বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

গত বছরের চেয়ে এবারে সার, সেচ ও শ্রমিকের মজুরির দাম বাড়ায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। তবে কালবৈশাখী ঝড়ে লিচু ঝড়ে না পড়লে গতবারের লোকসান পুষিয়ে লাভবান হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর ঠাকুরগাঁওয়ে লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই সেখানে লিচু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লিচুর ভালো ফলন হয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায়  শতাধিক বাগানে দেশি পাতি লিচু, কদমি লিচু, বোম্বাই লিচু, চায়না টু ও চায়না থ্রির আবাদ করা হয়েছে। তীব্র গরম ও সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেক গাছে মুকুল এলেও রোদে পুড়ে ও বাতাসে ঝরে গেছে অনেক মুকুল। তাই লিচু পড়া ও পোকামাকড় রোধে বালাইনাশক স্প্রে করে শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন লিচুবাগানের চাষিরা।

চাপায় নবাবগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে  বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে লিচুর ব্যবসা করি, এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। যদিও খরায় অনেক লিচু ঝরে পড়েছে, তারপরও লাভ হবে বলে আশা করছি। 

লিচু ব্যবসায়ী আবদুল কাউয়ুম ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনি ১০ বছর এই লিচু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও প্রায় ১৭ একর বাগান নিয়েছেন। বাগানগুলোতে পাতি লিচু, কদমি লিচু, চায়না টু এবং চায়না থ্রির জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার পাইকাররা গাছের লিচু কিনেছেন প্রতি হাজার ১৫০০ টাকা দরে। চলতি সপ্তাহে লিচু ভাঙা শুরু হবে।  

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ৬০ জন শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের তিন বেলা খাবার ও পকেট খরচসহ শ্রমিকপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা দিতে হয়। নিয়মিত পরিচর্যা ও বালাইনাশক ওষুধ দিতে হয়। 

লিচু ব্যবসায়ী সিহাব বলেন, এ বছর খরচ বেশি হওয়ায়, লিচুর দামটা একটু বেশি হবে। 

এদিকে বাগানে কিনতে আসা লিচু ব্যবসায়ী বাবু ঢাকা পোস্ট কে  বলেন, গত বছর কদমি লিচু হাজার ১২শ টাকা করে কিনলেও এ বছর প্রায় ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা হাজার কিনতে হচ্ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর ২৫৬ টি বাগানে ৯০৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। এবারে তার মাত্রা বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

আরিফ হাসান/আরকে