সাঁইজির ম্যুরাল

দোলপূর্ণিমা তিথিতে মরমি সাধক লালন সাঁইয়ের কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন স্মরণ উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কারণে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেন। দোলপূর্ণিমার উৎসব পালনে ছেদ পড়ায় তার ভক্ত-অনুসারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (২৪ মার্চ) কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান, লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

মরমি সাধক লালন শাহ জীবদ্দশায় দোলপূর্ণিমার রাতে শিষ্যদের নিয়ে সাধুসঙ্গে বসতেন। তারই ধারাবাহিকতায় সাঁইজির তিরোধানের পরও কালীগঙ্গার ধারে প্রতি বছর দিবসটি ঘিরে পালিত হয় এ উৎসব।

জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেছেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাউল ও ভক্তরা একসঙ্গে হলে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে সার্বিক বিবেচনা করে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে লালন স্মরণ উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বড় গণজমায়েত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বর্তমানে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে চলছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বড় গণজমায়েত করা হলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াভহ রূপ ধারণ করবে। কুষ্টিয়ায় এপর্যন্ত ৯১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং অনেক মানুষ আক্রান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা, বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রাদুর্ভাব এবং দোলপূর্ণিমা তিথিতে লালন স্মরণোৎসবের মতো জনসমাগম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিবেচনায় লালন স্মরণোৎসব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ১ মার্চ লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভা হয়। ওই সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক লুৎফুন নাহার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ওবায়দুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম, এনডিসি হাফিজুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আহমেদ সাদাত, সবুজ হাসান, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ছেঁউড়িয়ার মাঠে বসে থাকা লালন অনুসারীরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় প্রত্যেক বছরে নানা আয়োজনে বাউল সাধক লালন শাহ স্মরণে তিন দিনের দোলপূর্ণিমা স্মরণোৎসব পালন করা হয়। মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি এই মর্মবাণী ধারণ করে সাধুগুরুরা উৎসবটি পালন করে। দিবসটি ঘিরে প্রতি বছরই দূর-দূরান্ত থেকে সাঁইজির অনুষ্ঠানে আসেন ভক্তরা।

আধ্যাত্মিক গুরু-ফকির লালনকে স্মরণ এবং তার দর্শন থেকে সাঁইজির ধামে আসা ভক্তরা ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও মুক্তির স্বাদ খুঁজে ফেরেন। কিন্তু এবার অনুষ্ঠান স্থগিত করায় চরম হতাশ ভক্তগুরুরা। এরপরও বিভিন্ন স্থান থেকে লালন ভক্তরা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন লালন ভক্তরা।

রাজু আহমেদ/এমআইএইচ