ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান বাজার হাটচাঁদনির ভবনটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও আজও সেখানে চলে বেচাকেনা। পলেস্তারা খসে পড়া ছাদের নিচে বাঁশের চাটাই বেঁধে প্রতিদিন ২ শতাধিক ব্যবসায়ী ও অসংখ্য ক্রেতার বেচাকেনা চলে সেই বাজারে।

জানা যায়, ২০১০ সালে ওই ভবনের ছাদের এক অংশ ভেঙে একজন চাল ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৩ সালে হাটচাঁদনির বাজারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। আজও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালীগঞ্জ পৌরসভা হাটচাঁদনির ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন জেলা পরিষদ। তারপরও ছাদের নিচে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ভবনের বেশ কিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে গেছে। ভবনটিতে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জীবিকার তাগিদে সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

হাটচাঁদনিটিতে ২০ বছর ব্যবসা ধরে ব্যবসা করেন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, বাঁশের চরাট বা বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টার পড়েও পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। একসময় পরিত্যক্ত ভবন ঘোষণা করে সাইনবোর্ডও টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পড়ে নষ্ট হয়ে সেই সাইনবোর্ডও হারিয়ে গেছে। তাও পরিবর্তন হয়নি প্রায় ২ শতাধিক ব্যবসায়ীর ভাগ্য। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর ছাদের একটি অংশ ভেঙে মাথায় পড়ে অজয় কুমার নামে এক চাল ব্যবসায়ী মারা যান।

আরেক ব্যবসায়ী মালেক মালিথা ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা সকালে বাড়ি থেকে বের হই ঠিকই কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরব কিনা জানি না। এমন অবস্থা এই হাঁট বাজারের। জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ব্যবসা করছি। যে কোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মাধ্যমে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে ভবনটি প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে ১৫২টি দোকান রয়েছে। যার বেশিরভাগই কাঁচা সবজি, চাল ও মুদি দোকান। এর দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি টিনশেড ভবন। ভবন দুটির একটিতে চাল, ডাল, আটা-ময়দা অপরটিতে মাছ-মাংস বিক্রি হয়। একসময় উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভবনটির দায়িত্ব এখন কালীগঞ্জ পৌরসভার কাছে।

অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে তাদের। ভবনের বিভিন্নস্থানে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভা মেয়র আশরাফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৩ সালে তারা একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। ভবনটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণের জন্য মন্ত্রাণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরকে