কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করার জন্য আর কোনো দলের দরকার নেই, আওয়ামী লীগই যথেষ্ট। বিএনপিও এ থেকে বেশি দূরে নেই। 

শুক্রবার (২ জুন) গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক। 

কাদের সিদ্দিকী বলেন, সম্প্রতি গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত হেরে গেছেন। কেউ কি আগের দিন পর্যন্ত জানতেন আজমত হারবেন? আজমতকে হারানো দরকার ছিল তাই আওয়ামী লীগের লোকেরাই জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষের লোকের চেয়ে অনেক বেশি কান্নাকাটি করেছে। হয়তো তাই আল্লাহও কবুল করেছেন। কিন্তু পরে অবস্থাটা কি হবে। আগামী পাঁচ বছর এ সিটি চালাতে গিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নানা রকমের অসুবিধা হবে। কারণ একটা পদে তো দুইটা মানুষ বসতে পারে না। একটা পদের জন্য একটাই নেতা থাকেন, একজনই কর্তা থাকেন। কিন্তু গাজীপুরে জাহাঙ্গীর এবং তার মা সমান সমান কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন চালাবেন। আপনারা এর ফল এক বছরের মধ্যেই দেখতে পাবেন। 

তিনি বলেন, আমরা খুব একটা ভালো অবস্থার মধ্যে নেই। আজ কদিন যাবৎ দেশে আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে নানা কথা চলছে। বিএনপি বলছে এটা সরকারকে চাপে ফেলার জন্য আমেরিকা ভিসার রেসট্রিকশনটা দিয়েছে, যে নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করবে আমেরিকা তাকে ভিসা দেবে না। বিএনপি বলছে এটা আওয়ামী লীগের ক্ষতি, আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপিকে সোজা করার জন্য আমেরিকা ভিসা রেসট্রিকশন দিয়েছে। কেউ একবারও ভাবে না, এটা আওয়ামী লীগ বিএনপির ক্ষতি নয়, ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের, ক্ষতি হচ্ছে বাঙালির, ক্ষতি হচ্ছে আমাদের জাতির। এতে আমাদের সম্মান নষ্ট হচ্ছে এটা কেউ চিন্তা করে না। আমাদের জাতীয়ভাবে চিন্তা করতে হবে। সব দেশেই যাকে পছন্দ নয় তাকে ভিসা দেয় না। এটা নতুন কী হলো।  তবে আমেরিকা যদি কারো বন্ধু হয়, তাহলে তার আর কোনো শত্রুর দরকার নেই। ওই আমেরিকা বন্ধুত্ব করেই সব শেষ করে দেয়।  

কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। কিন্তু আজকে সেই মানুষের কোনো অধিকার নেই। ২২ পরিবারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে আমরা সংগ্রাম করে ২২ হাজার অথবা ২২ লাখ ধনী মানুষের হাতে দেশটাকে দিয়ে দিয়েছি। এর কোনো প্রতিকার নেই।

তিনি বলেন, সংগঠন ছাড়া সংগ্রাম করার আর কোনো বিকল্প হাতিয়ার নেই। সংগঠন হচ্ছে সবার আগে। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেক বড় নেতা ছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। কিন্তু তার কোনো সংগঠন ছিল না বলে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। এদেশের স্বাধীনতা এনে দিতে পারেননি। সংগঠন একটা মস্তবড় জিনিস। তাই দলীয় নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তাগাদা দেন কাদের সিদ্দিকী।   

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বীর প্রতীক, কেন্দ্রীয় সদস্য ফেরদৌস আলম, কেন্দ্রীয় যুব আন্দোলনের নেতা হাবিবুন নবী সোহেল, সিপিবির গাজীপুর জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন, ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মো. কাউসারুজ্জামান, যুব আন্দোলনের গাজীপুর শাখার নেতা মিঠুন সিদ্দিকী, কালিয়াকৈর উপজেলা কমিটির সভাপতি আলী হোসেন মন্ডল প্রমুখ। 

শিহাব খান/আরএআর