তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশজুড়ে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। দিনে-রাতে লোডশেডিংয়ে কষ্টে সময় কাটাচ্ছে মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে তালপাতার পাখার কদর বেড়েছে কুষ্টিয়ায়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১৫-২০ টাকার পাখা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকায়। 

কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার, রাজারহাট, হাসপাতাল মোড়, থানার মোড় ও কুষ্টিয়া রেলস্টেশন এলাকায় ঘুরে  দেখা গেছে, বাঁশের হাতল দিয়ে তৈরি তালপাতার হাতপাখার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। প্রচণ্ড গরমে শরীরে শান্তির পরশ দিতে তালপাতার পাখার জুড়ি নেই। দিনের বড় একটা সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। অসহ্য গরমে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় হাতপাখার চাহিদা ও দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। কয়েকদিন আগেও তালপাতার পাখা বিক্রি হতো ২০ টাকায়। ২০ টাকার পাখা এখন ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কয়েক দিনের ব্যবধানে পাখার মূল্যবৃদ্ধি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। 

পাখা ক্রেতা মুনমুন বলেন, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী আমি। গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে ৬৫ টাকা দিয়ে একটা তালপাতার পাখা কিনলাম। বিক্রেতারা চারগুণ দাম বাড়িয়েছে। বাড়তি দাম নেওয়া উচিত না, এগুলো অন্যায়। হুটহাট করে জিনিসের দাম বাড়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। 

পাখা বিক্রেতা জুয়েল রানা বলেন, প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে তালপাতার পাখার চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। বাজারে পাখার কিছুটা সংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে পাখার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিন আগে যে পাখা ২০ টাকা ছিলো সেই পাখা এখন ৫০ থেকে ৬০  টাকায় বিক্রি করছি। আমরা ব্যবসা করি লাভের জন্য। বেশি দামে কিনেছি, এজন্য বেশি দামে বিক্রি করছি। পাখার চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। অনেক দোকানে পাখা নেই। পাখা তৈরির কারিগররা এখন দিনরাত সমান তালে পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত। আগে ১০-১২ টাকা করে কিনতাম আর এখন ৩৫-৪০ টাকায় পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করি। 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সামনে প্রত্যাশা টেলিকমের মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটা তালপাতার পাখা ৭০ টাকায় বিক্রি করছি। বেশি দামে কিনেছি, এজন্য বেশি দামে বিক্রি করছি। আমরা সীমিত লাভ করি। আমি খোকসা থেকে পাখা কিনে এনেছি। 

কুষ্টিয়া রেলওয়ে স্টেশনে পাখা বিক্রেতা হবিবার রহমান বলেন, আমি রাজার হাট থেকে প্রতি পিস পাখা ৩৬ টাকা মূল্যে কিনেছি। ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। পাখার ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এজন্য দামও বেড়েছে। কয়েকদিন আগে ১০ থেকে ১৫ টাকা পিস কিনে ২০ টাকায় বিক্রি করতাম। এ বছর গরমের শুরুতেও হাতপাখার চাহিদা এতো ছিল না। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।

পাখা ক্রেতা সবুজ বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে গরমের মধ্যে খুব কষ্ট হয়। গরম থেকে রক্ষা পেতে ৭০ টাকা দিয়ে হাতপাখা কিনলাম। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করে পকেট কাটছে। ১৫ টাকার পাখা এখন ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

পাখা ক্রেতা ও রিকশাওয়ালা মনিরুল ইসলাম বলেন, গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী কম। আমাদের পেশায় আয় উপার্জন কমে গেছে। গরমে যাত্রী কম পাওয়া যাচ্ছে। গরম থেকে বাঁচার জন্য একটা তালপাতার পাখা কিনলাম ৬০ টাকা দিয়ে। পাখার দাম প্রায় চারগুণ বেড়েছে। 

রাজু আহমেদ/আরএআর