সনদ জালিয়াতি করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার অভিযোগে সাতক্ষীরার ১৬ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করাসহ বেতনের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ১৮ মে সমগ্র দেশের সনদ জালিয়াতি করে চাকরি করা ৬৭৮ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রজ্ঞাপনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা পেলে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তর। তাছাড়া জেলায় জাল সনদধারী চাকরিরত কোনো শিক্ষক রয়েছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তর বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

জাল সনদধারী শিক্ষকরা হলেন, সাতক্ষীরা দিবা নৈশ কলেজের ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক বিলকিছ জাহান সিদ্দিকা, মার্কেটিং বিভাগের শিল্পী রানী পাল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক শান্তি রঞ্জন পাল, তালার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক সুচিত্রা রায়, কলারোয়া বেগম খালেদা জিয়া কলেজের ইতিহাসের প্রভাষক মো. আমিরুল ইসলাম, কলারোয়া সোনার বাংলা ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক তৌহিদুর রহমান, কলারোয়া বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা কলেজের সমাজকল্যাণের প্রভাষক নির্মল কান্তি সরকার, বামনখালি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম, আশাশুনির গদাইপুর জোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইলিয়াস হোসেন, পুইজালা বি এম আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ঝর্না তরফদার, সদর সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাকলী দেবনাথ, আশাশুনি গোদাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফজলুর রশিদ, সহকারী শিক্ষক নির্মল কুমার বিশ্বাস, তালার ফলেয়া চাঁদকাটি অগ্রণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক শেখ ফিরোজ আহমেদ, তালার শুভাষিনী কলেজের প্রদর্শন/কম্পিউটার শিক্ষক মো. ইয়াকুব আলী শেখ, সাতক্ষীরা শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামান।

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার অজিত কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সনদ জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের ৬৭৮ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রদত্ত তালিকায় সাতক্ষীরা জেলায় চাকরিরত ১৬ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে। প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুযায়ী জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তাদের এমপিও বন্ধ করা এবং অবৈধভাবে এমপিও বাবদ ভোগ করা অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাল সনদধারী যেসব শিক্ষক অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। যারা অবসরে গেছেন বা চাকরি ছেড়েছেন তাদের টাকা অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করতে বলা হয়েছে। আর জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের।

তিনি আরও বলেন, প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে নির্দেশনা সংযুক্ত করা হলেও অফিসিয়ালি কোনো চিঠি এখনো পাঠানো হয়নি। মন্ত্রণালয় কর্তৃক অফিসিয়াল চিঠি পেলে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাল সনদধারী ১৬ জন শিক্ষক ছাড়াও জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাদের নিবন্ধনসহ অন্যান্য শিক্ষা সনদে জালিয়াতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষা অফিসার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সন্ধান ইতোপূর্বে পেয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছিল। তাদের অনেকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তাছাড়া এখনো যারা জাল সনদে চাকরিতে কর্মরত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোহাগ হোসেন/এবিএস