বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে ৩৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

বুধবার (৭ জুন) দুপুর ১২টায় জীবনানন্দ দাশ সড়কের একটি কনভেনশন হলে গণমাধ্যমে তার ইশতেহার তুলে ধরেন।

এর মধ্যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু, বরিশালকে গ্যাস সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা, ট্যাক্স কমানো, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক মতবিনিময় ও ‘সবার বরিশাল’ নামের অ্যাপ চালু করে নাগরিক সমস্যা শোনা ও সার্বক্ষণিক তদারকির ওপর গুরুত্বারোপ করবেন বলেও জানান।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম হত্যাকাণ্ডের আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী। সেই রাতে ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং আমার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, আমার ভাইবোন, ভগ্নিপতিসহ আরও অনেকে। ওই ঘটনায় ঘাতকের বুলেটবিদ্ধ হয়ে আজও আমি বেঁচে আছি। আমার বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করে নিজেকে বরিশাল নগরবাসীর সেবক হিসেবে সম্মানের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন উন্নয়নবঞ্চিত বরিশাল নগরবাসীকে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নসহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিক জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নগরবাসীকে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সব ধরনের হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমার প্রত্যাশা বরিশাল হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, পরিবেশবান্ধব স্মার্ট ও মানবিক শহর।

তার দেওয়া ইশতেহার বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিতে তাকে নৌকায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।

আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর ইশতেহার

১. দীর্ঘদিন উন্নয়নবঞ্চিত বরিশাল নগরীর উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিসহ বিশেষজ্ঞগণের সমন্বিত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি উন্নত ও জনবান্ধব বরিশাল নগর গড়ে তোলা।

২. অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন করে কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদান সহজ করে অনলাইন সেবা চালু।

৩. নাগরিক মতামত গ্রহণ করার মাধ্যমে বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন সহনীয়, হয়রানি ও ভীতিমুক্ত করা। এছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্ল্যান অনুমোদনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪. নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারসহ নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ।

৫. নগরের খালসমূহ খননের বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ।

৬. নগরীর বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদ্যমান রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ।

৭. নগরভবনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সকল ধরনের নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চলমান অনলাইন ওয়ান-স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনয়ন।

৮. প্রতিটি ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা যথাসময়ে অপসারণ এবং পচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে জৈব সার, বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় লাইন চার্জ সহনীয় করে শতভাগ বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা।

১০. নগরের রিকশা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনসমূহ চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনাসহ নগরের প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত সড়ক বাতির ব্যবস্থা করা।

১১. জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করা।

১২. ‘সবার বরিশাল’ শীর্ষক অ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসীর নিকট থেকে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও তা সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে সমাধানপূর্বক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা।

১৩. বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তোলা।

১৪. পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বরিশাল নগরীকে গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা।

১৫. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ।

১৬. বিভিন্ন কলোনিবাসীর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

১৭. ওয়ার্ডভিত্তিক নগরীর বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।

১৮. ইতিপূর্বে সম্পন্নকৃত বেলতলা ও রূপাতলী এলাকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণরূপে চালু করা।

১৯. হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

২০. নগরীতে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।

২১. তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন এবং বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা।

২২. বরিশাল নগরীতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।

২৩. প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বরিশালকে ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তোলা।

২৪) বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদানসহ সরকার প্রবর্তিত সকল ধরনের ভাতা যথাযথভাবে বণ্টন করা।

২৫. বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নগরীর রাস্তার নামকরণ।

২৬. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসম্প্রদায়িক নগর প্রতিষ্ঠা করা।

২৭) তরুণ সমাজের জন্য আইটি নগরী প্রতিষ্ঠাসহ ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

২৮. নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

২৯. নগরীর বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহের আধুনিকায়ন এবং ইনফেকশাস ডিজিস নিরাময় সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

৩০. নগরীর স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

৩১. নগরীর সকল মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩২. নগরীর সকল মন্দির ও গীর্জার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩৩. ইউএনডিপির অর্থায়নে পুনরায় সিডিসি কার্যক্রম চালু করা।

৩৪. শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নগরীতে বিনোদনকেন্দ্র ও পার্ক নির্মাণ।

৩৫. বরিশালকে শিল্প, বাণিজ্য ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ