পূর্বশত্রুতা ও মামলা-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গ্রাম্য সালিসে ধার্যকৃত জরিমার ৯ লাখ না দেওয়ায় সাবেক এক ইউপি সদস্যের পরিবার দুই বছর ধরে বাড়িছাড়া রয়েছে। বাড়িছাড়া হওয়ার পর ওই পরিবারটির বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের তারাকান্দিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।

এ অবস্থায় পরিবারটির প্রায় ছয় একর ফসলি জমির মধ্যে অধিকাংশ জমি প্রতিপক্ষের লোকজন জবরদখল করে চাষ করে আসছে এবং কিছু জমি পতিত রয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, তারাকান্দিয়া গ্রামের রোকন মিয়া ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নূরনবী বেগের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে পূর্বশত্রুতা চলে আসছিল। ২০১৯ সালে রোকন মিয়ার বড় ভাই আস্তু মিয়া সিএনজিযোগে তার ভগ্নিপতির বাড়িতে যাওয়ার পথে গোগবাজার নামক এলাকায় মারা যান।

পরে এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ এপ্রিল রোকন মিয়া বাদী হয়ে নূরনবী বেগ, তার ছেলে তাপস বেগ ও ইকবাল বেগসহ সিএনজি অটোরিকশাচালকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।

মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ১০ জুন উভয়পক্ষের বিরোধ ও মামলা-মোকদ্দমা মীমাংসা করতে সালিস ডাকেন স্থানীয় মাতবররা। সালিসকারীরা নূরনবী বেগের পরিবারকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেন। পরে নূরনবী বেগ জরিমানার টাকা দিতে অসম্মতি প্রকাশ করলে গ্রামবাসী পরিবারটিকে বাড়িছাড়া করে। সেই থেকেই নূরনবী বেগ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুই বছর ধরে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করে আসছেন।

পরিবারটি এলাকাছাড়া হওয়ার পর প্রতিপক্ষের মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী, তারেক মিয়া, রোকন মিয়া, চান মিয়া, হৃদয় মিয়া, আল আমিন, রাহুল মিয়া ও তাদের লোকজন মিলে নূরনবী বেগের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটসহ ফসলি জমি চাষাবাদের মাধ্যমে ভোগদখল করে আসছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।

এ বিষয়ে কথা হয় সাবেক ইউপি সদস্য নূরনবী বেগের সঙ্গে। তিনি বলেন, আস্তু মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা করে এবং পরিকল্পিতভাবে গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে আমাকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা না দেওয়ায় দুই বছর ধরে পরিবার নিয়ে বাড়িছাড়া আছি। এ সুযোগে তারা আমার বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে এবং আমার ছয় একর ফসলি জমির মধ্যে অধিকাংশ জমিই ভোগদখল করে চাষাবাদ করছে।

এ নিয়ে প্রতিপক্ষের মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের কেউ বাড়িছাড়া করেনি। তারা সালিসে ধার্যকৃত জরিমানার টাকা না দিয়ে নিজেরাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এ ছাড়া নূরনবী বেগের বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট ও ফসলি জমি দখল করে চাষাবাদের কথাও অস্বীকার করেন তিনি।

এসব বিষয়ে মামলার বাদী রোকন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি এ ঘটনা নিয়ে কথা বলতে অসম্মতি প্রকাশ করেন।   

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে জানান, জরিমানার টাকা না দেওয়ায় পরিবারটিকে বাড়িছাড়া করার ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে এবং এসব ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ