কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে ছয় বছরেও শেষ হয়নি ৩ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের কাজ। ফলে রৌমারী ৩৫-বিজিবিসহ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চান্দারচর, নওদাপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, বোল্লাপাড়া ও খাটিয়ামারীর ৬ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এ নিয়ে উপজেলা সমন্বয় সভায় কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে তাগিদ দিলেও কাজ হয়নি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুন বন্দর তুরা স্থলবন্দর থেকে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা দিয়ে খাটিয়ামারী কাদেরের বাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা মাটি ভরাট ও পাকাকরণের জন্য ২০১৭ সালে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাস্তাটি মেরামত ও পাকাকরণের কাজটি টেন্ডারের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের মেসার্স ছাকিব ট্রেডার্স পায়। যার মালিক মো. আহসানুল লিটন। যিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার এবং তিনি ওই রাস্তার কাজ করার জন্য জিঞ্জিরাম নদীর কিনারে প্রায় ১০০ গজ দৈর্ঘ্য গাইড ওয়াল নির্মাণ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি ওই রাস্তার কাজ না করেই পালিয়ে যান। ২০১৯ সালে ওই রাস্তাটি মেরামতের জন্য মোক্তার হোসেন নামের অপর এক সাব ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তিনিও সামান্য মাটির কাজ শুরু করেই বরাদ্দকৃত বিল উত্তোলনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। বরাদ্দকৃত বিলের সম্পুর্ণ অংশ উত্তোলন বন্ধ করে দিলে তিনিও কাজটি না করে চলে যান। পরের বছর ২০২০ সালে স্থানীয় সাইদুর রহমান নামের একজন ঠিকাদার মোক্তার হোসেন ঠিকাদারের কাছ থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ নিয়ে আবারও রাস্তা মেরামত শুরু করেন। প্রায় ৪ মাস আগে খাটিয়ামারী কাদেরের বাড়ি থেকে ঈদগা মাঠ পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ শেষ করেন। কিন্তু চার মাস থেকে রাস্তার কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে ওই রাস্তার কাজ বন্ধ থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। রাস্তাটির মেরামতের কাজ শেষ না করায় বাংলা বাজার ও মোল্লার চর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যদের টহল এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাওদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা নুরুল ইসলাম জানান, ছয় বছর আগে রাস্তাটির মেরামত ও পাকাকরণের কাজ শুরু করলেও আজও কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে এই রাস্তায় যানবাহন প্রবেশ করে না। পথচারীদের অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে মালামাল বাজারে নিয়ে যেতে হয়। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে, মানুষের খুব কষ্ট। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করা না হলে বর্ষা মৌসুমে মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।

চান্দারচর গ্রামের গোলাম রব্বানী বলেন, রাস্তা পাকা করার জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতার জন্য ছয় বছরেও রাস্তার কাজ আর শেষ হয় না। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে। কোনো গাড়ি এই রাস্তায় আসতে চায় না। উৎপাদিত কৃষি ফসল বাজারে বিক্রি করতে গেলে দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হয়। উন্নয়নের নামে এই রাস্তা জনগণের গলার কাটা হয়ে আছে।

সাব ঠিকাদার সাইদুর রহমান বলেন, আমি ওই রাস্তার মূল ঠিকাদার নই। আমার আগে আরও দুজন ঠিকাদার কাজ শুরু করে চলে গেছে। আমি ওই সময়ে যে বাজার মূল্যে কাজটি নিয়েছিলাম তার থেকে বর্তমানে ইটসহ সব মালামালের দাম বেশি। কাজটি করতে গিয়ে আমায় অনেক লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই চাইলেও অর্থনৈতিক কারণে কাজটি দ্রুত শেষ করতে পারছি না। এছাড়া ভারতীয় সীমান্তের কাছে হওয়ায় বিএসএফের বাঁধার কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে আকাশ ভালো থাকলে ঈদের আগে আবারো কাজ শুরু করব।

রৌমারী ৩৫ বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার খালেদুর রহমান জানান, রাস্তাটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে ১৫০ গজের ভেতরে হওয়ায় বিএসএফ বিভিন্ন সময়ে বাধা দিয়েছে। তবে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বর্তমানে রাস্তাটির মেরামত কাজ শেষ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে। গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। ওই রাস্তাটির কাজ দ্রুত শেষ করা গেলে সীমান্ত চোরাচালান কমবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মামনুর রহমান বলেন, রাস্তাটি ভারতীয় সীমান্তরেখার খুব কাছাকাছি হওয়ায় ওই রাস্তার কাজ করতে গেলে বিএসএফর বাধা পেতে হয়। সেজন্য কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা বিজিবির সঙ্গে কথা বলে এটার সমাধানের কথা বলেছিলাম। ঠিক কি কারণে ছয় বছরেও একটি তিন কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ করা গেলে না সেটি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জুয়েল রানা/আরকে