কুষ্টিয়ায় তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় ১৯ আসামি কারাগারে
আলোচিত-সমালোচিত কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার ১৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৮ জুন) দুপুরের দিকে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী।
বিজ্ঞাপন
কারাগারে প্রেরণকৃত ১৯ আসামিরা হলেন-দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামের হোসেন খা, বাবু, ছাহের শেখ, ইমদাদ, আকতার, কালাম, সজল, মোক্তার, বাবলু, মনির, ইকবাল, বিপ্লব, আমজাদ, নাজমুল, কুদ্দুস, ছানোয়ার, নান্নু, রাজ্জাক ও নজরুল ইসলাম।
এর আগে উক্ত মামলায় এই ১৯ আসামিকে হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য জামিন দিয়েছিলেন। পরে জামিনের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় জামিনের জন্য আবেদন করলে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন। এ মামলার এক নারী আসামি শিখা বাদে অপর আসামিরা আগে থেকেই জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মন্ডল গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়। ওই সময় মন্ডল গ্রুপের লোকজনদের ৫টি বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে দিনু মন্ডল, ফারুক ও আকতার মন্ডল নামে তিনজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুরুতর জখম ও দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন প্রায় ২৫ জন। হামলার খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এ ঘটনার পরের দিন ২৮ এপ্রিল মোজাম মন্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামিদের জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে গত ১০ মে ৬২ আসামির আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চ ৬২ জনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এসব মামলায় ৬ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আসামিদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
নিহতদের পরিবারের লোকজন বলেন, রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে খা ও শিকদার গ্রুপের শতাধিক লোকজন নির্মমভাবে মন্ডল বংশের লোকজনদের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে মন্ডল বংশের প্রায় ২৫ জন গুরুতর আহত হন। তাদের দেওয়া আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক, আকতার মন্ডল ও দিনু মন্ডল ঢাকায় মারা গেছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। খুনিদের ফাঁসি চাই।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মোজাম মন্ডল বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন তার নিজ গতিতে চলুক। তিনজনকে নির্মম ও নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়সারাভাবে তদন্ত করছে। আসামিদের সঙ্গে যোগসাজসে মামলার তদন্ত কার্যক্রম ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরিত করার দাবি জানাচ্ছি। প্রতিপক্ষের পেট্রোল বোমার আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সবার শাস্তি চাই। আমি প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
রাজু আহমেদ/এমএএস