গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে লোকসানের মুখে খামারিরা
সাতক্ষীরায় কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৪৩৮টি। যেখানে চাহিদা মিটিয়ে ৩৪ হাজার ৫৬০টি পশু অতিরিক্ত রয়েছে। চাহিদার মিটিয়ে অতিরিক্ত পশু ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর।
এদিকে বিগত কয়েক বছর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে গরু না আসায় খামারিরা কিছুটা লাভবান হলেও এ বছরে গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে। আশানুরূপ লাভ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরা প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর জেলার ৭টি উপজেলার ৯ হাজার ৯২৬টি খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৮টি পশু। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৫৭টি গরু, ৭৫৬টি মহিষ এবং ছাগল ও ভেড়া ৮০ হাজার ১৮৫টি প্রস্তুত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ জানান, সাতক্ষীরায় এ বছর ৯ হাজার ৯২৬টি খামারে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৮টি পশু বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত থাকলেও চাহিদা রয়েছে ৮০ হাজার ৪৩৮টি। অর্থাৎ ৩৪ হাজার ৫৬০টি পশু অতিরিক্ত থেকে যাবে। এ সব পশু ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে।
কোরবানীর পশুর বাজার দর নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করছেন না খামারিরা। বর্তমানে গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে খামারে লোকসান হওয়ায় এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে।
সাতক্ষীরা শহরের তালতলা এলাকার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘শান্ত’ নামে আমার খামারে একটি বিদেশী জাতের গরু আছে যার দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা, কিন্তু ক্রেতারা ৫ লাখের বেশি দিতে চাচ্ছেন না। গো খাদ্যের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য গরু ব্যবসায় লাভ করা খুব কষ্টকর। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর ৫০টি কোরবানির গরু প্রস্তুত করেছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আসছে গরু কিনতে। আশা রাখি কোরবানির আগে খামারের সমস্ত গরু বিক্রি হবে। তবে লোকসান হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সাতক্ষীরা তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকার খামারি আজমল জানান, গত দুই বছর আগে গরু ব্যবসা বেশ লাভজনক ছিল। তবে দিনের ব্যবধানে গো খাদ্যের দাম যে তুলানায় বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রেতাদের কাছে সে দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক সময় লোকসানে গরু বিক্রি করতে হয়। খরচের বিষয়টি বিবেচনা করে যে গরুর বাজার দর ১ লাখ, ক্রেতা সেই গরু ৭০-৮০ হাজারের বেশি দম দিতে চায় না।
তিনি আরও জানান, গো খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি হওয়ায় খামার বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন অনেক খামারি। খামারিদের যদি সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হয় সেক্ষেত্রে লোকসান হওয়ার শঙ্কা কমে যাবে বলে দাবি তার।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ জানান, অস্বাভাবিক হারে গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ে অনেক খামারি। এক্ষেত্রে এ সব বিষয় বিবেচনা করে খামারিদের সুবিধার্থে কৃষকদেরকে "নেপিয়ার ঘাস" চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাস্তার ধারে, বাড়ির উঠানে, পতিত জমিতে এই ঘাস চাষ করে খরচ কমাতে পারছেন অনেক খামারি। এ ঘাস চাষ করে কিছুটা হলেও খামারিরা উপকৃত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত বছরের চাহিদার তুলনায় এ বছর ১৯ হাজার ৪৩১টি পশুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছিল ৬০ হাজার ৯০৭টি পশু। যেখানে কোরবানির জন্য মোট পশু মজুদ ছিলো ১ লাখ ৮ হাজার ৫টি । যা চাহিদার চেয়ে ৪৭ হাজার ৯৮টি পশু বেশি ছিল। সেখানে চলতি বছর ৩৪ হাজার ৫৬০টি পশু অতিরিক্ত রয়েছে।
সোহাগ হোসেন/আরকে