‘রবি-বুধুর’ সঙ্গে মোটরসাইকেল ফ্রি
গরু দুটির জন্ম রবিবার ও বুধবার। তাই ভালোবেসে মালিক ডাকেন ‘রবি’ ও ‘বুধু’ নামে। আসন্ন কোরবানির ঈদে হাট কাঁপাতে প্রস্তুত এই দুটি বৃহৎ আকারের গরু। বিশাল আকৃতির রবি ও বুধুর ক্রেতার জন্য লোভনীয় উপহার ঘোষণা করেছেন তাদের মালিক। একসঙ্গে রবি-বুধুকে কিনলে দেওয়া হবে বাজাজ ব্র্যান্ডের পালসার মডেলের একটি আকর্ষণীয় মোটরসাইকেল।
রংপুর মহানগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মীরগঞ্জের তালুক তামপাট এলাকার খামারি রফিকুল ইসলাম সরকার। তার খামারে পরম যত্নে বেড়ে উঠেছে ফ্রিজিয়ান জাতের রবি ও বুধু। এ দুটি গরু মোটাতাজাকরণে খামারি কোনো ইনজেকশন দেননি; খাবার হিসেবে দিয়েছেন পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার। এখন রবির বয়স তিন বছর আর বুধুর বয়স চার বছর।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, পরম যত্ন নিয়ে রবি ও বুধুর পরিচর্যা করছেন খামারি রফিকুল। গরুর খাদ্যের দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও সজাগ তিনি। এমনকি তীব্র গরমে গরুর যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য তার কাছে রয়েছে দুটি ফ্যান। আলো সরবরাহ ঠিক রাখতে রয়েছে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা। এই গরু দুটির পেছনে প্রতিদিন দুই হাজার টাকার মতো খরচ হয়। যারা পরিচর্যা করছেন তাদের কণ্ঠ এই গরু দুটির চেনা হয়ে গেছে। কেউ রবি ও বুধু বলে ডাক দিলেই গরু দুটি সাড়া দেয়। যত্নআত্তির কমতি না থাকায় রবি ও বুধু এখন রফিকুলের পরিবারের আপনজনে পরিণত হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা রবির বর্তমান ওজন ২৫ মণ, আর এক বছরের বড় বুধুর ওজন ২৬ মণ। তাদের মালিক এই গরু দুটির দাম হেঁকেছেন ১৫ লাখ টাকা করে। ৩০ লাখে তাদের কিনলে সঙ্গে একটি মোটরসাইকেল ফ্রি দেওয়ার অফার দিয়েছেন খামারি রফিকুল ইসলাম সরকার।
বিজ্ঞাপন
এদিকে গরু দুটিকে একনজর দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন খামারে আসছেন। তাদের মতে, এবারের কোরবানি ঈদে রংপুর শহরের ভেতরে এ দুটিই এখন পর্যন্ত আলোচনায় থাকা সবচেয়ে বড় গরু।
বিশাল আকৃতির এই গরু দুটিকে দেখতে নগরীর পার্ক মোড় থেকে এসেছেন শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ ও খাদিমুজ্জামান। তারা বলেন, রংপুরে এত বিশাল আকৃতির গরু আছে যখন জানতে পারলাম তখন অপেক্ষা না করে দেখতে চলে এসেছি। দেখে খুব ভালো লাগল। কিনতে না পারলেও এত বড় গরু দেখতে তো পারলাম। তাদের মতে এই গরু দুটি রংপুরের সবচেয়ে বড় গরু।
প্রতিবেশী হারুন অর রশিদ বলেন, গরু দুটি অনেক যত্ন করে লালন করেছেন ওই খামারি। নিজে কষ্ট করলেও গরু দুটিকে কখনো কষ্ট দেননি। গত বছর গরু দুটিকে হাটে তোলা হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি। এবার আশানুরূপ দাম পেলে পরিশ্রম সার্থক হবে তার। আগামীতে এমন গরু পালনে উৎসাহ বাড়বে।
রফিকুলের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই রবি ও বুধুকে খুব যত্ন সহকারে লালন-পালন করেছে। এই গরমে যেন গরুগুলোর কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করে রেখেছে সে। গরু দুটির যত্ন ও লালন-পালনে ভাইয়ের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। আশা করছি এ বছর কাঙ্ক্ষিত মূল্যে গরু দুটি বিক্রি হবে।
রফিকুলের ছেলে তূর্য ইসলাম বলেন, এই গরু দুটির জন্ম রবি ও বুধবার। আমার দাদি আদর করে গরু দুটির নাম রেখেছেন রবি ও বুধু। গত বছর গরু দুটিকে বিক্রির জন্য হাটে তোলা হলেও ভালো দাম পাওয়া যায়নি। এজন্য গত বছর বিক্রি করিনি। এবার কোরবানি ঈদে ভালো দামে বিক্রি হবে আশা করছি।
খামারি রফিকুল ইসলাম জানান, বুধুকে চার বছর ও রবিকে তিন বছর ধরে লালন-পালন করে আসছি। কখনো তাদের পরিচর্যা ও খাবারের বিষয়ে অবহেলা করিনি। এখন রবির ওজন ২৫ মণ ও বুধুর ওজন হবে প্রায় ২৬ মণ। দাম ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ টাকা হাঁকিয়েছি। কেউ একসঙ্গে গরু দুটিকে কিনলে উপহার হিসেবে একটি পালসার মোটরসাইকেল দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে গো-খাদ্যের অনেক দাম। গরু দুটির পেছনে প্রতিদিন দুই হাজার টাকার মতো খরচ হয়। গতবার গরু দুটির দাম চাওয়া হয়েছিল ২০ লাখ, তবে ১৪ লাখ টাকার বেশি কেউ দিতে চায়নি, এজন্য বিক্রি করিনি। এ বছর ৩০ লাখ টাকা দাম চেয়েছি, তবে দরদাম করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন পাইকার এসে দেখে যাচ্ছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর